দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মূল কারণ কাশ্মির: দার

কাশ্মির ইস্যুকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার প্রধান কারণ বলে মনে করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন যে ভারতের অংশগ্রহণ ব্যতীত এই ইস্যুর সমাধান পাকিস্তানের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়।

সম্প্রতি মার্কিন সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসহাক দার বলেন, “গত কয়েক দশক ধরে আমরা এই ইস্যুটি বয়ে বেড়াচ্ছি। শুধু ভারত কিংবা পাকিস্তান নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মূল কারণ এই কাশ্মির ইস্যু। এটি এখন আর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং একটি স্বীকৃত বৈশ্বিক সংকটে রূপ নিয়েছে।”

পাকিস্তান এই ইস্যু সমাধানে আন্তরিকভাবে আগ্রহী দাবি উল্লেখ করে উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা একটি দ্বিপাক্ষিক ইস্যু। আপনি যেমন এক হাতে তালি বাজাতে পারবেন না, তেমনি আমরাও এককভাবে এই সংকট সমাধান করতে পারব না।”

“তবে যত শিগগির সম্ভব এই ইস্যুটির সমাধান প্রয়োজন। ইতোমধ্যে অনেক বিলম্ব হয়েছে এবং এখন কেউই আর বিলম্ব চায় না। পাকিস্তান আঞ্চলিক সহিংসাত বা উদ্বেগ বাড়াতে মোটেই আগ্রহী নয়।”

১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের সময় থেকে কাশ্মির সংকটের শুরু। দুই রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণের সময় জম্মু-কাশ্মির কোন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হবে— জম্মু-কাশ্মিরের শেষ রাজা হরি সিংয়ের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন ব্রিটেনের শাসকরা। কিন্তু বিভিন্ন দিক বিবেচনায় হরি সিং জানিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মির স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে; কোনো দেশের অংশ হবে না।

কিন্তু ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পর জম্মু-কাশ্মির দখলে অভিযান শুরু করে পাকিস্তান এবং কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের অনতিদূরে পৌঁছে যায়। এই পরিস্থিতিতে কাশ্মিরের রাজা হরি সিং জম্মু-কাশ্মিরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।

রাজা হরি সিংয়ের স্বাক্ষরের পর অভিযানে নামে ভারতের সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। সেই থেকে জম্মু-কাশ্মিরের মোট ভূখন্ডের ৪৩ শতাংশ ভারতের এবং ৩৭ শতাংশ পাকিস্তানের দখলে রয়েছে। বাকি ২০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনের হাতে। চীনের অধিকৃত ওই অঞ্চলটি সিয়াচেন নামে পরিচিত।

তবে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই জম্মু ও কাশ্মিরের শতভাগ দাবি করে আসছে। এ ইস্যুতে গত ৭৫ বছরে ৩ বার যুদ্ধে জড়িয়েছে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ।

এদিকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দিয়েছিলেন। ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মিরের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কখনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এবং ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের লোকজন বা কোনো বিদেশি জম্মু-কাশ্মিরে জমি বা সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবে না।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট পার্লামেন্টে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেয় নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসীন বিজেপি।

এদিকে গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।

অতর্কিত এই হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।

দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছে ৩১ জন এবং আহত হয়েছে ৫৭ জন।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর তিন দিনের মধ্যে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করল পাকিস্তান। আরবি ‘বুনিয়ানি উল মারসুস’-এর বাংলা অর্থ সীসার প্রাচীর।

এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ।

শনিবার থেকে কার্যকর হয় এই যুদ্ধবিরতি।

সূত্র : জিও নিউজ

আরআর/এসএন

Share this news on: