মিশরের সঙ্গে দ্রুত পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য দ্রুত মিশরের সঙ্গে পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি করা হবে। মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিশরের রাষ্ট্রদূত ওমর মহি এলদিন আহমেদ ফাহমি (ঙসধৎ গড়যরব ঊষফরহ অযসবফ ঋধযসু)-এর সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা জানান।
 
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিশরে পাঠানো হয়েছে। মিশরের পক্ষ থেকে এটি অনুমোদিত হলে চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হবে। তাছাড়া সাধারণ পাসপোর্টধারীদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে মিশরের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
 
বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ইস্যু, পুলিশের প্রশিক্ষণ, অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ, আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাস দমন, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, পারস্পরিক আইনি সহায়তা, সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা জানান, মিশর বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম দেশ। দেশটি প্রাচীন সভ্যতা ও ইসলামী ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এসময় উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত ওমর মহি এলদিন আহমেদ ফাহমি জানান, গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিশরের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।

রাষ্ট্রদূত বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে সেরা পুলিশ প্রশিক্ষণ একাডেমি মিশরে অবস্থিত। মিশর বাংলাদেশকে পুলিশের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া মিশর বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। এ সময় রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, আন্তঃদেশীয় অপরাধ নেটওয়ার্ক দমনের বিষয়টি পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হতে হবে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা ছাড়াও দু'দেশের মধ্যে অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তা বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।
 
বাংলাদেশের বর্তমানে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ও নিরাপত্তা উদ্বেগ। কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তে নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করছে। উপদেষ্টা এসময় মিশরকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে আর্থিক সহায়তা ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে নৈতিক সহায়তার আহ্বান জানান।

সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা বিষয়ে মিশর বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মিশরের সঙ্গে ইসরায়েলের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে যা বিশ্বের অন্যতম বিরোধপূর্ণ সীমান্ত। তথাপি মিশরের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করে আসছে।

তিনি জানান, এ বিষয়ে দু’দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ আয়োজনের মাধ্যমে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এটি করা গেলে বিজিবি মিয়ানমার সীমান্তে আরও দক্ষতা ও নিপুণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে মর্মে আমি মনে করি।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব (রাজনৈতিক-১) মুঃ জসীম উদ্দিন খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক বি এম জামাল হোসেন সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।   

এমআর/টিএ
 

Share this news on: