সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচিত শব্দ ‘কফিল’ আর ‘সান্ডা’। নিউজফিড এখন কফিলের ছেলের জন্য সান্ডা ধরা আর রান্না করার ছবি-ভিডিওতে সয়লাব। বিষয়টি নিয়ে ট্রল ও মিমও হচ্ছে প্রচুর। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা অনেকেই বুঝতে পারছেন না হঠাৎ কেন সান্ডা নিয়ে এত আলোচনা।
সান্ডা আলোচনায় এসেছে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি ভ্লগারের ভিডিও থেকে, যারা মূলত সৌদি আরবে কাজ করেন। দৈনন্দিন কাজের বাইরে সৌদি প্রবাসীরা ভিডিও বানিয়ে শেয়ার করেন ফেসবুকে।
এদের মধ্যে যারা সৌদি কফিল (যার অধীনে একজন প্রবাসী কাজ করেন) এবং তার পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের নানা দৃশ্য তুলে ধরেন তাদের ভিডিও অনেকবেশি জনপ্রিয় হয়। এসব ভিডিওর মাধ্যমেই কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা লিজার্ড বা সান্ডা আলোচনায় আসে।
ওইসব ভিডিওতে দেখা যায় প্রবাসীরা তাদের কফিল বা ছেলেদের জন্য মরুভূমিতে সান্ডা ধরছেন। সংগ্রহের পর রান্না করে তা পরিবেশন করছেন। প্রবাসীদের দেয়া তথ্যমতে, সান্ডার মাংস মে মাসের দিকে বেশ রসালো হয়।
কারণ মরুভূমির খাবার খেয়ে এ সময় প্রাণীগুলো হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে। যে কারণে এখন এসবের ভিডিও বেশি বেশি প্রচার হচ্ছে। প্রবাসীদের পোস্ট করা ভিডিও এবং রিল্সে দেখা যায় তাদের কফিল ও স্বজনরা বেশ আয়েশ করে সান্ডা খাবার হিসেবে গ্রহণ করছেন।
তবে ভিডিও ও ছবিতে দেখে মনে হতে পারে সৌদির লোকজন মনে হয় খালি সান্ডাই খায়— আর কিছু খায় না! রান্নাঘর নেই, রেস্টুরেন্ট নেই, শুধু মরুভূমি আর সান্ডা! তবে মজার কথা হলো সব সৌদি লোক কিন্তু সান্ডা খায় না। মূলত আরবের বেদুইন সম্প্রদায়ের লোকজন এটি খেয়ে থাকে। সান্ডা দেখতে অনেকটা গুইসাপের মতো হলেও, এটি মূলত তৃণভোজী— অর্থাৎ ঘাস, লতা, পাতা এসবই খায়।
আর অপ্রচলিত এই খাবারের ভিডিও দেখেই অনেকেই এ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এসবের ফলশ্রুতিতে জনপ্রিয় হচ্ছে সান্ডার ভিডিও। সান্ডার বিরিয়ানি ও রান্না করা মাংসের ছবি-ভিডিও নিয়েও হচ্ছে ট্রল ও মিম।
সান্ডার সংজ্ঞায় ব্রিটানিকা বলছে, এটি আসলে স্পাইনি টেইলড লিজার্ড বা কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা টিকটিকি। এর বৈজ্ঞানিক নাম ইউরোমাস্টিক্স। এটি অ্যাগামিডি গোত্রের অন্তর্গত, এর এক ডজনের বেশি প্রজাতি রয়েছে।
এভাবে সান্ডা কোনো নির্দিষ্ট প্রাণীর নাম নয়। মরু অঞ্চলে বাস করা এই গোত্রের বেশ কয়েকটি প্রজাতিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। আরবি ভাষায় একে বলা হয় ‘দব’। মরুভূমিতে বসবাসকারী এই গোত্রের লিজার্ডদেরই সাধারণভাবে সান্ডা বলা হয়।
এরা সাধারণত উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক পরিবেশে বাস করে। সৌদি আরবের মরুভূমি এদের অন্যতম প্রাকৃতিক আবাসস্থল। দিনের বেশিরভাগ সময় এরা রোদ পোহায় এবং সন্ধ্যা হলেই গর্তে ঢুকে পড়ে। বিপদ টের পেলে পাথরের খাঁজে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই এরা গাছের পাতা বা ফলমূল খায়। মাঝেমধ্যে ছোট পোকামাকড়ও খায় এরা।
এই সরীসৃপের শরীর গিরগিটির মতো। তাপমাত্রা ও ঋতুভেদে এরা রঙ বদলাতে পারে। ঠান্ডায় এদের গায়ের রঙ গাঢ় হয়, যাতে সূর্যের তাপ বেশি শোষণ করতে পারে। গরমে শরীরের রঙ হালকা হয়। এভাবে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে এরা বেঁচে থাকে।
এফপি/এস এন