আ.লীগ অফিস থেকে ব্যানার খুলে নিলো জুলাই যোদ্ধারা

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ অফিস দখল নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক ও সমালোচনার পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে দুঃখ প্রকাশ করেছে ‘জুলাই যোদ্ধারা’।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা শহরের এক রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক রায়হান চৌধুরী অপু।

লিখিত বক্তব্যে তিনি দখলের ঘটনাটি দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ইতোমধ্যে জুলাই যোদ্ধা ব্যানারটি ভবন থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, গতকাল বুধবার (১৪ মে) শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তায় একটি বিধ্বস্ত পরিত্যক্ত পোড়া ভবন আমরা পরিষ্কার করেছি। যেটি ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে জানতাম। ভবনটি পরিষ্কার করার পর আমাদের সংগঠনের ব্যানারটি টাংগিয়ে দিই। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মিডিয়ার সামনে তুলে ধরি। কিন্তু অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে লক্ষ্য করেছি আমাদের কার্যক্রমকে অনেকেই নেতিবাচকভাবে নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাই আমি সবার প্রতি দুঃখ প্রকাশ করছি।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে আমরা যেটি করতে চাই সেটি আমরা মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। অনেকেই ভাবছেন আমরা এ ভবনটি দখলে নিয়েছি। দখল ভাবাটা আক্ষরিক অর্থে দোষের কিছু না। আমি কাউকে দোষারোপ করতেও চাই না। তাই নিজেদের অপারগতা স্বীকার করে আমরা এ ভবনটি মোটেও দখলে নিইনি বরং সমাজের এটি ভালো কাজের জন্য নিজস্ব অর্থ খরচ করে সংস্কার-পূর্বক সাময়িক ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করেছি মাত্র। আপনারা যারা বিভিন্ন রাজনীতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আর এই কার্যক্রমে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও নেই। তাই সব বিতর্ক নিরসনে আমরা ইতোমধ্যে আমাদের ব্যানারটা নামিয়ে ফেলেছি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই যোদ্ধারা আন্দোলনে এসেছিলাম একটি সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। সুন্দর সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। আন্দোলন চলাকালীন এবং আন্দোলন পরবর্তী সময়ে নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে আমরা চলছি। আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আমরা সমাজকে যে যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।

তারই ধারাবাহিকতায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যতদিন আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা কোনো ঘর না পাচ্ছি ততদিন এই পরিত্যক্ত ভবনটিতে আমরা একটি অস্থায়ী জিমনেসিয়াম করবো। যেখানে আমরা যুবকরা সমাজ পরিবর্তনের জন্য টিম হয়ে কাজ করবো। আমাদের লক্ষ্য যুব সমাজকে মাদক থেকে ফিরিয়ে এনে সমাজের কাজে লাগানো।

আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের যুবসমাজকে মাদকের আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে হলে একটা ওপেন জিমনেসিয়াম প্রয়োজন। এটি করতে পারলে জেলার অনেক গরীব খেলোয়াড়ও উপকৃত হবে। যারা অর্থের অভাবে নিজেদের ফিটনেস ঠিক রাখতে জিম প্র্যাকটিস করতে পারে না। আর আমাদের দ্রুত এ কাজটা শুরু করতে একটা ঘরের দরকার ছিল।

তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিই পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত জেলা কার্যালয় পরিষ্কার করে এটিতে অস্থায়ীভাবে আমরা জিমনেসিয়ামের কাজ শুরু করবো। আর আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ঘর পেলে সেখানে চলে যাবো।

এখানে যদি আপনারা চিন্তাশীল মানুষ খুবই স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করেন দেখবেন আমরা সমাজের পরিবর্তনের জন্য বিতর্কিত হওয়ার মতো কোনো কাজ করিনি। তবে যেহেতু মানুষ এটিকে আমাদের দখল হিসেবে নিয়েছে তাই আমরা সমস্ত বিতর্ক আমাদের কাঁধেই নিচ্ছি। সেইসঙ্গে ঠাকুরগাঁওবাসীর সব দল, মত ও শ্রেণির মানুষের কাছে সহযোগিতাও প্রত্যাশা করছি।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ মে) দুপুরে জুলাই যোদ্ধাদের কয়েকজন যুবক ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঝুলিয়ে দেন ‘জুলাই যোদ্ধা ঠাকুরগাঁও’ নামের একটি ব্যানার। যা নিয়ে সৃষ্টি হয় বিতর্ক।

আরএ/টিএ

Share this news on: