এনসিপি নেতাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিরোধ দেখা যাচ্ছে: ফরহাদ মজহার

একসময় সেক্যুলার বনাম ইসলামপন্থি বিরোধ দেখা গেলেও এখন ইসলামপন্থিদের মধ্যে বিরোধ দেখা যাচ্ছে। ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন বিরোধ দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের মধ্যেও সাংস্কৃতিক বিরোধ দেখা যাচ্ছে। এটি ক্ষতিকর। এজন্য গণঅভ্যুত্থানের মর্ম বুঝতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।

শনিবার (১৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে ফরহাদ মজহার এসব কথা বলেন। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার :কুরআন কী বলে’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে কুরআন পাঠ আন্দোলন।

বৈঠকে ফরহাদ মজহার বলেন, এনসিপির মধ্যে এ বিরোধের বড় কারণ হলো গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণ বিজয়ের দিকে নিয়ে যেতে না পারা। তার আগেই ছাত্র-তরুণদের বিরাট আত্মত্যাগকে নস্যাৎ করতে একটি সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে। ছাত্রদের দমন করার জন্য ক্রমাগত বিভিন্নভাবে অপপ্রচারের মাধ্যমে তাদের চেষ্টাকে নস্যাৎ করার প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মর্ম হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব কায়েম করা। গণসার্বভৌমত্ব মানে হচ্ছে জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া। গণঅভ্যুত্থানে যেসব তরুণ জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তারা কোনো বিশেষ ধর্ম বা মতাদর্শ কায়েম করার জন্য লড়াই করেননি। তারা ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার বিলুপ্তির জন্য লড়াই করেছেন।

তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি জুলাই অভ্যুত্থান ঘটায়নি। এটি দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল। গত বছরের ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার সংবিধান মেনে সরকার গঠনের শপথ নেওয়া ভুল ছিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা ইতিহাস পড়েননি। সেজন্য তখন সংবিধান বাতিল করার দাবি করেননি।

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপনিবেশবাদী, সাম্রাজ্যবিরোধী লড়াইয়ের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত। যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়টি তরুণেরা বুঝতে না পারছে, এর পক্ষে সঠিক বয়ান হাজির না করছে, ততক্ষণ পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া করবে, কেউ বোতল ছুড়ে মারবে। পুরো বিষয়টি ধ্বংস করে ফেলবে। তারা সামষ্টিক স্বার্থ রক্ষা করতে না পারলে জনগণের কাছে জবাবদিহি দিতে হবে।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের গালি দেওয়ার কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, নারী কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু কেউ ইসলামি আদবের মধ্যে থাকলে কোনো মেয়েকে বেশ্যা বলে গালি দিতে পারে না। কথায় কথায় এরা অন্যকে গালিগালাজ করছে। ফেসবুকে মতবিরোধ হলেও কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করে। এটি ইসলামের শিক্ষা নয়। এদের শাস্তি হওয়া উচিৎ।

বৈঠকে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ফ্যাসিস্ট শাসনামল এবং বিগত ৫৩ বছরের শাসনামলে আদালতকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এটিকে অতিক্রম করতে হবে।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র তালবাহানা হচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, মূল রাজনৈতিক অংশীজনদের এই অন্যায়ের কাঠামো পরিবর্তন করার কোনো ইচ্ছা নেই।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও আওয়ামীতন্ত্র, যার মাধ্যমে সরকার এবং তার আশপাশের ক্ষমতাবানেরা লুটপাট ও পাচার করতে পারে, তা নিষিদ্ধের বিষয়ে তেমন দাবি-দাওয়া নেই। এই আওয়ামীতন্ত্র থাকলে আওয়ামী লীগ নিজেও ফেরত আসতে পারে। আবার এখন যারা আছে বা সামনের দিনগুলোতে যারা আসবে, তারাও বড় আওয়ামী লীগ হয়ে উঠতে পারে। মিয়ানমারে মানবিক করিডর দেওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সঙ্গে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত হতে পারে বলে মনে করেন দিদারুল ভূঁইয়া। এসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

কুরআন পাঠ আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে এবং দি ইক্বরার প্রতিষ্ঠাতা সাদিক মোহাম্মদ আলমের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী, বিইউপির সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মেজর (অব.) আলমগীর হোসেন, প্রাবন্ধিক ও গবেষক আশরাফুল ইসলাম এবং দৈনিক দেশের পত্র পত্রিকার সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দাদাসাহেব ফালকের বায়োপিক নিয়ে বলিউড বনাম দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ঠান্ডা লড়াই! May 18, 2025
img
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে সোমবার ব্লকেড কর্মসূচি May 18, 2025
img
পাঁচ নায়িকার মধ্যে একজনকে বিয়ে করবেন হিরো আলম May 18, 2025
img
বড়সড় বিপাকে ‘মহাগুরু’, অনুমতি ছাড়াই বহুতল নির্মাণ! May 18, 2025
img
কাশ্মিরের নিরাপত্তায় এবার সাবেক সেনা সদস্যদের মাঠে নামাচ্ছে ভারত May 18, 2025
img
কানে আবারও নজর কাড়লেন জ্যাকলিন, বলিপাড়ায় ‘টক অফ দ্য টাউন’ May 18, 2025
img
স্ত্রী অজান্তে ডেটিং অ্যাপে চ্যাট, বিতর্কের পর অভিজিৎ সাওয়ান্ত May 18, 2025
img
রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে বিতর্কের মুখে আইসিসি চেয়ারম্যান May 18, 2025
img
ফ্রান্স-স্পেন সফরে যাচ্ছেন না ড. ইউনূস May 18, 2025
img
ওয়েব সিরিজের স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে একসঙ্গে কঙ্কনা ও আমোল May 18, 2025
img
টলিউড থেকে হঠাৎ হারিয়ে গেলেন অভিনেত্রী ঋত্বিকা! May 18, 2025
img
‘পর্ন ইন্ডাস্ট্রির আয় কোটি ডলার, কিন্তু অভিনেতাদের হাতে কিছুই আসে না’ — মিয়া খলিফা May 18, 2025
img
সেবা দিয়ে জনগণের মন জয় করতে হবে : ডিএমপি কমিশনার May 18, 2025
img
পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্টে নতুন ফি নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক May 18, 2025
img
ভারত যাচ্ছেন জয়, সাক্ষাৎ হবে শেখ হাসিনার সঙ্গে! May 18, 2025
img
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মুস্তাফিজের বিশ্বরেকর্ড May 18, 2025
img
সাম্য হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগ থানা ঘেরাও, পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধি দল May 18, 2025
img
ছোটপর্দার ‘সিম্পল গার্ল’ এখন গ্ল্যামার কুইন May 18, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এফটিএ আলোচনা, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে খুলতে পারে বড় সম্ভাবনার দ্বার May 18, 2025
img
বিয়ে না করেই বাবা সাইফপুত্র ইব্রাহিম May 18, 2025