জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ও চিকিৎসক তাজনূভা জাবীন বলেছেন, "গোলাম আজমকে পরাজিত করেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।" তিনি অভিযোগ করেন, "একটি গণহত্যাকারী দলের সহযোগী হিসেবে যারা একাত্তরের ইতিহাসে কালিমা লেপেছে, তারা আজও জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি।"
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তাজনূভা জাবীন বলেন, "আওয়ামী লীগ শুধু একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্যই হুমকি হয়ে উঠেছে।" তিনি দাবি করেন, "আমাদের রাজনৈতিক দল এনসিপি অল্প সময়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রে এসেছে। তবে বিএনপি আমাদের শত্রু ভাবছে বলে আমি মনে করি না।"
রাজনীতিতে নবাগত হলেও, তাজনূভা নিজের অবস্থান সম্পর্কে খোলামেলা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, "আমি এখনো মনে করি না যে, আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মতো পুরোপুরি যোগ্যতা অর্জন করেছি। কেন মানুষ আমাকে ভোট দেবে, সেটা বুঝিয়ে বলা আমার দায়িত্ব। তবে এটা সত্য, আমি শিখছি। ভুল করছি, তবে শুদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছি।"
নারী রাজনীতি ও সমাজে নারীর অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বাংলাদেশে এখনো নারীকে মানুষ হিসেবে দেখা হয় না। আমি গালিগালাজ শুনি, কারণ আমার সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট বক্স বন্ধ। অথচ নারীদের সাইবার নিরাপত্তা এখন এক বিশাল ইস্যু। সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদেরকে যেভাবে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ও ব্যক্তিগত চরিত্র হরণের মাধ্যমে আক্রমণ করা হয়, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।"
তিনি আরও বলেন, "নারীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মনোভাব শুধুই পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক সময় নারীরাও অন্য নারীকে অপমান করে। এটা বন্ধ করতে হলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি, সাইবার সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে কার্যকরভাবে।"
তাজনূভা বলেন, "নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে অন্যান্য সংস্কার কমিশনের মতোই দেখি। এটা নিয়ে কেউ একমত হবেন, কেউ হবেন না — এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একমত না হলেই কাউকে নারী বিদ্বেষী বলা ঠিক নয়।"
তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বলেন, "স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব। কিন্তু দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলই স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে দলীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, যাতে তাদের ঘনিষ্ঠরা নির্বাচনে আসে।
এতে করে সাধারণ মানুষের উপকার কমে যায়।"
এনসিপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তাজনূভা জাবীন বলেন, "আমরা চাই এনসিপি এমন একটি দল হোক, যা অন্য দলগুলোর থেকে আলাদা। জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারুক এবং বৈষম্য দূর করতে পারুক। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা যেন আর কখনো দেশে ফিরে না আসে, সেজন্য আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করব।"
আত্মসমালোচনার কথাও স্বীকার করে তিনি বলেন, "আমরা জানি, আমাদের অনেক কিছুই ঠিক করতে হবে। সেই প্রক্রিয়ায় আমরা আছি। আমরা শুধু জনগণের কাছ থেকে একটু সময় ও আস্থা চাই, যাতে আমরা নিজেদের সংশোধন করে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি।"
টিকে/টিএ