এনবিআর দুই ভাগ করার প্রক্রিয়া সঠিক নয়, ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ : দেবপ্রিয়

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো (সিপিডি) ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুইভাগ করা প্রক্রিয়ায় ঠিক হয়নি। আলোচনা ব্যাতিরেকে, পেশাজীবিদের জায়গা সংকুচিত ও অন্যান্য অংশীজনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে যেটা করা করা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি। এখন ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সোমবার (১৯ মে) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিনি এসব কথা বলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এনবিআর নিয়ে বর্তমানের যে আলোচনা চলছেন সে বিষয়ে বলতে বলবো- দুইভাগ করা ঠিক আছে। এটা আমাদের শ্বেতপত্রে সুপারিশে ছিল। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি।

আলোচনা ব্যাতিরেকে, পেশাজীবিদের জায়গা সংকুচিত ও অন্যান্য অংশীজনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে করা হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি। এটাকে এখন ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি আমরা পরিসংখ্যান দেখি তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কমেছে, ঋণ প্রবাহ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, এডিআই কমেছে ও পুঁজিবাজারের সকল সূচক নিন্মমুখী। এই অবস্থায় কর্মসংস্থান কিভাবে হবে? বেকারত্বে হার বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি হারের চেয়ে মূল্যস্ফিতির হার বেশি, অর্থ্যাৎ তাদের প্রকৃত মজুরি কমে যাচ্ছে। তাহলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এটা এখন জোর দিয়ে বলতে পারছি না। জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে আছে। এটা বাড়াতে হবে। আগামি অর্থবছরেও ১০ এর নীচে থাকছে। পরোক্ষ করের বৃদ্ধির হার বেশি। তার মনে হচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপরই করের বোঝা বাড়ছে।

বাজেটে ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, রাজস্ব ব্যয়ের দুটি খাত সবচেয়ে বেশি হচ্ছে- প্রথমটি সুদ ব্যয় আর দ্বিতীয়টি ভর্তুকি। সরকারের অর্থনীতি পরিচালনা কোনো ঘোষিত নীতিমালার আলোকে হচ্ছে না, তা চলছে এডহক ভিত্তিতে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার দুর্বলতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য মুদ্রানীতি এখনও প্রতিফলিত হয়নি। ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে এলে আমরা একটা সিগনাল পাবো।

বাংলাদেশে এ মুহূর্তে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যুব দারিদ্র বাড়ছে এটা বলা বাহুল্য।

দেবপ্রিয় ভট্টাচারর‌্য বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়টি আমাদের নজরে রেখেছেন। টাস্কফোর্স থেকে বলেছি দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকার আসলেও তারা অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবেলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারে নাই। যে ফিসক্যাল পলিসি নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেটাও কিন্তু গত সরকারের। পুরানো যে কাঠামো রয়েছে সেটাকেই ধুয়ে-মুছে কাজ করা হচ্ছে, সেটা আমাদের পছন্দ হয়নি। টাস্কফোর্সের যে সুপারিশ ছিল, সেটা ধরে যে গতি আসার কথা ছিল, তা আমরা দেখতে পাইনি। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ-মিয়ানমার দিয়ে জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, একইভাবে বৈষয়িক অর্থনীতির পরিস্থিতিও খুবই জটিল। বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাপনা খুবই সংকটের মধ্যে আছে। এই সংকটের মধ্যেই আগামির বাজেট করতে যাচ্ছে সরকার।

দেশের আমলাতন্ত্র আরও শক্তিশালী হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চোরতন্ত্রে ছিলেন আমলারা, ব্যবসায়ীরা আর রাজনীতিবিদরা। এখন রাজনীতিবিদরা পালিয়ে গেছেন, ব্যবসায়ীরা ম্রিয়মাণ আর আমলারা পুরো শক্তি নিয়ে পুনরীজ্জীবিত।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অনিসুজ্জামান চৌধুরী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "বাস্কেট কেস" ধরণের পুরনো, নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দেশের উন্নয়ন ও সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপর তিনি জোর দেন। পাশাপাশি, স্থিতিশীল ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর অনুপস্থিতির দিকটি তুলে ধরেন, যা আজকের দিনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিরাপত্তা ইস্যুতে আফগানিস্তানকে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান চীন-পাকিস্তানের Aug 21, 2025
img
চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অফিস Aug 21, 2025
img
হাসিনা ১৬ বছরে যা করেছে, এরা ১ বছরে সেটা করছে : নুরুল হক নুর Aug 21, 2025
img
ঢাকাসহ ৪ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা, ভূমিধসের শঙ্কা Aug 21, 2025
img
ঝিনাইদহের মহেশপুরে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে আহত ১৫ Aug 21, 2025
img
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি সিন্ডিকেটের মূল হোতা স্বপনের ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক Aug 21, 2025
img
মেসিকে ছাড়াই জোড়া পেনাল্টিতে মিয়ামিকে জেতালেন সুয়ারেজ Aug 21, 2025
img
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের Aug 21, 2025
img
বিদেশি যাত্রীদের জন্য ওমরাহ সেবায় নতুন সুবিধা ঘোষণা সৌদি আরবের Aug 21, 2025
img
ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস, থাকবে ভ্যাপসা গরম Aug 21, 2025
img
হবিগঞ্জে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড, পুড়ল বেশ কয়েকটি যানবাহন Aug 21, 2025
img
নাইজারে ভয়াবহ বন্যায় প্রাণ গেল ৪৭ জনের, বাস্তুচ্যুত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ Aug 21, 2025
img
গাজা সিটি দখলে ইসরাইলের হামলা শুরু, নিহত ৮১ Aug 21, 2025
img
সরকারি সফরে চীন গেলেন সেনাপ্রধান Aug 21, 2025
img
বান্দরবানে জিপ উল্টে একজন নিহত Aug 21, 2025
img
তিতাস গ্যাসের নামে প্রতারণা চক্র সক্রিয়, গ্রাহকদের সতর্কবার্তা Aug 21, 2025
img
সিলেটে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিলেন সারোয়ার আলম Aug 21, 2025
img
এনসিবির ভিডিওতে আলিয়ার বার্তা, “মাদককে না বলুন” Aug 21, 2025
img
দেশের ৭ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস Aug 21, 2025
img
বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেবেন না দীর্ঘদিনের পরিচালক মাহবুব আনাম Aug 21, 2025