মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাচ্যুত এনএলডির নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধে জড়িত উভয়পক্ষের মধ্যে প্রথমবারের মতো সরাসরি যোগাযোগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গত মাসে মিয়ানমারে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক সফরে যান। সেখানে তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এর পরদিন মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) নেতাদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
মিয়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার। সু চি নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের প্রতিনিধি ও জান্তাবিরোধীদের সমন্বয়ে পরবর্তীতে দেশটিতে ছায়া সরকার হিসেবে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট গঠন করা হয়।
সামরিক জান্তার সঙ্গে এনইউজির আলোচনার বিষয়ে উভয়পক্ষ অবগত রয়েছে বলে বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট অন্তত দু’টি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে। তারা বলেছেন, এর মাধ্যমে মিন অং হ্লেইং মূলত শান্তি আলোচনার বিষয়ে আগ্রহী বলে দেখাতে চেয়েছেন। যদিও তিনি এই ছায়া সরকারকে ‘‘সন্ত্রাসী’’ হিসেবে আখ্যা দেন।
বুধবার মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, ‘‘আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে পৃথকভাবে যোগাযোগ করছি। তবে আমি মনে করি, তাদের পরস্পরের মাঝে সরাসরি কথা বলার সময় এসেছে এখন। মিয়ানমারের জনগণকেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও মিয়ানমারের জান্তা সরকারের একজন মুখপাত্র কোনও সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের মুখপাত্র নে ফোন ল্যাত বলেছেন, সামরিক বাহিনী যদি ছয়টি শর্ত মেনে নেয়, তবেই কেবল তারা আলোচনায় বসতে রাজি আছেন।
এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে, নতুন সংবিধানের অধীনে সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকা ছাড়াই একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন গঠন এবং রূপান্তরকালীন ন্যায়বিচার কাঠামো তৈরি। রয়টার্সকে নে ফোন ল্যাত বলেন, যদি সামরিক বাহিনী এসব শর্ত মেনে নেয়, তাহলে আমরা বিদ্রোহ বন্ধ ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনায় বসব।
তবে স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসের অধিকাংশ সময় মিয়ানমার শাসন করা সামরিক বাহিনীর পক্ষে এসব শর্ত মানা অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু আনোয়ার ইব্রাহিম যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। আর আনোয়ার ইব্রাহিম বর্তমানে এই জোটের চেয়ারম্যান। রয়টার্স বলেছে, মিয়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার এই ধরনের কোনও সংলাপে আগ্রহ দেখিয়েছে।
দেশটিতে কয়েক বছর ধরে চলা সহিংসতায় এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত ও ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ভয়াবহ এই সংঘাতে দেশটির অর্থনীতিও চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মিয়ানমারের পুরোনো জাতিগত বিদ্রোহী ও নতুনভাবে গঠিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তাবাহিনীকে হটিয়ে বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দেশটির জান্তাবাহিনী বর্তমানে কেবল মধ্যাঞ্চলীয় ভূখণ্ডে সীমিত হয়ে পড়েছে।
একটি কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। যদিও এই বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনও তথ্য জানাননি তিনি।
সূত্র: রয়টার্স।
এফপি/টিএ