সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দুটি বিষয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা অনিবার্য : জামায়াত আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচনকে অর্থবহ করতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার লাগবেই। সেজন্য সংস্কারের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। আর নির্বাচনের আরেকটি রোডম্যাপ ঘোষণা। এই দুটি বিষয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা অনিবার্য হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এই দুটি রোডম্যাপের একটিও জনগণের সামনে আসেনি। আর এখান থেকেও কিছু সন্দেহ সংশয় জন্ম নিয়েছে।

শনিবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান, এই সময় অনেকগুলো বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২৪ এর আন্দোলনে যে পরিবর্তন হয়েছে, সেই পরিবর্তনের একটি বিশাল আকাঙ্ক্ষার জায়গা রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ছাত্রসমাজ এ জীবন বাজি রেখে রুখে দাঁড়িয়েছিল, জনগণও তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। জনগণ মনে করে বিগত সরকারের আমলে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ভোটের অধিকারকে একেবারেই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকটি নির্বাচনকে নির্বাচনের নামে তামাশা করা হয়েছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হিসেবে নির্বাচিত, ১৮’র নির্বাচন নিশিরাত, ২০২৪ সালের নির্বাচন ডামি নির্বাচন করা হয়েছিল। এসব নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার যেমন কেড়ে নেওয়া হয়েছে তেমনি নির্বাচন সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক অনীহা তৈরি করা হয়েছে।

এর অবসানের জন্য অবশ্যই এমন একটি নির্বাচন হতে হবে, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতের প্রতিফলন হবে, জনগণের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করবেন।

‘৯০ এর গণ-আন্দোলনের পরে যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তখনো সংবিধানে এ রকম কোনো প্রভিশন ছিল না এই ধরনের সরকারের। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতেই একটি সরকার গঠিত হয়েছিল এবং সেই সরকার একটি অর্থবহ নির্বাচন উপহার দিয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে বলা হয় সেই নির্বাচনটি সবচেয়ে অর্থবহ ও সুন্দর নির্বাচন।’

তবে এবারের প্রত্যাশা আরও অনেক বেশি। কারণ, ৯০ এর গণ আন্দোলনে ২৪ এর আন্দোলনের মতো এত ত্যাগ ও রক্ত দিতে হয়নি। বিপুল পরিমাণ ত্যাগ কোরবানির মাধ্যমে এই অর্জন। সেই অর্জনকে অর্থবহ করতে হলে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ— বলেন জামায়াত আমির।

তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্য হতেই হবে, তবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য। এজন্য জামায়াত দাবি করেছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দুটি রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা হোক। নির্বাচনকে অর্থবহ করতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার লাগবে। সেজন্য সংস্কারের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। বলা হোক এই মাসের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন হবে। নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। তাহলে জনগণের মধ্যে স্বস্তি ও আস্থা তৈরি হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত এই দুটি রোডম্যাপ এর একটিও জনগণের সামনে আসেনি। এখান থেকেও কিছু সন্দেহ সংশয় জন্ম নিয়েছে। আমরা সকলকে অনুরোধ জানাবো যত দ্রুত সম্ভব এ দুটি রোডম্যাপ জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। তাহলে জনমনে আস্থা ফিরে আসবে।

‘আমরা এবং এ দেশের জনগণ যেনতেনও কোনো নির্বাচন আমরা চাই না। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই যদি নির্বাচনী ব্যবস্থা নিহত হয় তাহলে ঐরকম নির্বাচন জনগণ কবুল করবে না। প্রত্যাখ্যান করবে। এজন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর যারা এই দেশে মানুষকে গুম খুন করেছে, দেশ ও জনগণের অর্থসম্পদ লুটপাট করেছে তাদের বিচারের প্রক্রিয়াটা দৃশ্যমান হতে হবে। আমরা জানি বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে। আর অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই সব বিচার সম্পন্ন হয়ে যাবে এমনটাও দাবি কেউ করে না। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য দৃশ্যমান কিছু কাজতো সামনে আসতে হবে। সেরকম কিছু এখনো জনগণ দেখতে পাচ্ছেন না। এই জায়গাতেও জনগণের আশঙ্কা, যদি অপরাধীদের বিচার সুষ্ঠুভাবে করা না হয় তাহলে অপরাধী চক্র বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যেতে পারে। আমরা এটাও হতে দিতে পারি না।

জামায়াত আমির আরও বলেন, মনে রাখবেন আমরা বিচারের নামে কোনো অবিচার চাচ্ছি না। বিচারের নামে যে অবিচার আমাদের ওপর করা হয়েছিল বা অন্যদের ওপর করা হয়েছিল সেরকমটা অন্যদের ওপর করা হোক তা চাই না। আমরা চাই বিচারটা ফেয়ার হোক।

এফপি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাশিয়ার সামরিক হেলিকপ্টার ‘এমআই-৮’ বিধ্বস্ত May 24, 2025
img
জনগণের আস্থা ফিরাতে সংস্কার ও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দিন: জামায়াত আমির May 24, 2025
img
নোয়াখালীতে সড়কে মায়ের চোখের সামনে সন্তান নিহত May 24, 2025
img
পুশ-ইনকৃতদের কাছ থেকে একঘেয়ে বক্তব্য, প্রশ্ন তুলছে বাংলাদেশ May 24, 2025
img
বাংলাদেশকে বিক্রি করার ষড়যন্ত্র চলছে : ব্যারিস্টার ফুয়াদ May 24, 2025
img
মাত্র ৪০ হাজার টাকায় ভারতের তথ্য পাকিস্তানের কাছে বিক্রি! May 24, 2025
img
দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র করে নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারল বাংলাদেশ May 24, 2025
img
বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হলো ভারতে আটক ২৪ বাংলাদেশিকে May 24, 2025
img
সোমবারের মধ্যে কমিশন ও বুধবারের মধ্যে তফসিল চেয়ে বাগছাসের বিক্ষোভ May 24, 2025
img
জামায়াতের যে দুই নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় যাচ্ছেন May 24, 2025
img
ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করার দাবিতে শাহবাগে মার্চ ফর ইউনূস May 24, 2025
img
নাহিদ ইসলামকে নিয়ে রাশেদ খানের বিস্ফোরক মন্তব্য May 24, 2025
img
আমাকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর পারসেপশন তৈরির চেষ্টা চলছে : আসিফ মাহমুদ May 24, 2025
img
আমি শাকিব খানের মতো হতে চাই : ভাবনা May 24, 2025
img
পুঁজিবাজার থেকে পাচার হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা : দেবপ্রিয় ভট্টাচার May 24, 2025
img
সাবেক আইনমন্ত্রীর সহযোগী তৌফিকার ৫৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ May 24, 2025
img
অন্ধকার জগতে পরিবর্তন আনতে চান পুরনো মুখ মিয়া খলিফা May 24, 2025
img
দেশের ১৮ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস May 24, 2025
img
অস্ত্র রপ্তানি আরও বাড়াবে রাশিয়া, ঘোষণা পুতিনের May 24, 2025
img
বিয়ের পর ভাগ্য খুলে গেছে : মেহজাবীন May 24, 2025