একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি রিভিউ মামলায় খালাস পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটটি বলছে, বিচার বিভাগের এ রায় এবং সারাদেশে চলমান প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে জোটের নেতারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, সিপিবির সভাপতি কমরেড শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)–এর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এবং সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
বিবৃতিতে তারা বলেন, সারা দেশে আজ শাসনযন্ত্র অচল। সচিবালয়ে কর্মকর্তারা আন্দোলনে, পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীরা অবস্থান কর্মসূচিতে, শিক্ষকরা ধর্মঘটে, এনবিআরের কর্মীরা কলমবিরতিতে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধীর খালাস দেশবাসীর ক্ষোভ ও হতাশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফ্যাসিস্ট আমলে বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ ও ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে জনগণের আস্থা নষ্ট করা হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষ প্রত্যাশা করেছিল, দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু আজ সেই আশাও ম্লান।
নেতারা অভিযোগ করে বলেন, বিগত আওয়ামী শাসনামলে যেমন বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে। গণগ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা, গণহারে আসামি করে ফরমায়েশি রায়ে নাগরিকদের হয়রানি করা হয়েছে, জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে গণহত্যার জন্য প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে মামলা না করে ঢালাও গণহারে মামলা দিয়ে বাস্তবে বিচার প্রক্রিয়াকে দুর্বল বা প্রকৃত অর্থে বিচারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও গণমামলার আসামিদের কাছ থেকে পুলিশ ও কিছু রাজনৈতিক দলের লোকজনকে চাঁদাবাজির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিগত আমলে যেমন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গণহারে সবার শাস্তি দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বেশ কিছু মামলায় সকলকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এতে করে বিচার ও আইনের শাসন সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা, অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তোরণের পথে এক অশনি সংকেত।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতাকারী, আলবদর, আলসামস বাহিনী গঠন করে হত্যা, খুন, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সাথে জড়িতদের সকলের বিচার এখনও সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ সময় পরে হলেও যাদের বিচার হয়েছে তাদের সবার রায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে কার্যকর করেনি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আমলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামাত নেতা আজহারুল ইসলামের সেই রায় বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় দেশবাসীর মনে প্রশ্ন বর্তমান সরকারের সময়েও বিচার বিভাগ কী স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে?
বিবৃতিতে তারা দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রশ্নে ১৯৭১ এর গণহত্যাকারী ও তাদের সহযোগীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং ২৪ এর গণহত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি জানান। লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ভুলিয়ে দিয়ে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যে সকল অপশক্তি তৎপর রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এবং ৭১ এর গণহত্যাকারী ও ২৪ এর গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়া জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
আরএ