বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার জন্য আরেকটি নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। যে জাতি '৪৭-এ স্বাধীনতা এনেছে, '৫২-তে ভাষার অধিকার সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে, তারা আবার '৭১-এ এক হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জীবন, রক্ত, ইজ্জত বিলিয়ে দিয়ে আরেকবার স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।
আবার জুলাই-আগস্টে সকলের অংশগ্রহণে এক মহাগণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করেছে। সেই জাতি আবারও একাত্ম হয়ে, জাগ্রত জনতার ব্যানারে সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেবে এবং আরেকটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডাঃ তাহের বলেন, আমাদের ভূমিকা এমন হওয়া উচিত নয়, যাতে মানুষ আবার হতাশ হয়ে পড়ে। শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না হয়। সেই নারী, সেই শিশু, সর্বসাধারণ, রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালা, নিঃস্ব মানুষেরা যে আত্মত্যাগ করেই মহান বিজয় অর্জন করেছিল—তাদের সেই ত্যাগ ও রক্ত যেন অপচয় না হয়।
এই জাতি বারবার সংগ্রাম করলেও, কতিপয় নেতৃত্ব ও লোভী মানুষের কারণে বারবার বঞ্চিত ও প্রতারিত হয়েছে। মানুষ আশা করে, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে এই চেতনাবোধ জাগ্রত হবে, তারা এই ভূমিকায় উত্তীর্ণ হবে এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করবে। আমরা যেন একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। আমরা যেন কোনো বৈশ্বিক শক্তির কাছে মাথা নত না করি এবং একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ি।
এখানে আমাদের ধৈর্যের প্রয়োজন, ত্যাগের মনোভাবের প্রয়োজন। এখানে ব্যক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ এবং জনগণের স্বার্থ বড় হোক—এটাই রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের প্রধান স্লোগান হওয়া উচিত, আজকের এই বাংলাদেশে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে ডাঃ তাহের বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তন—এটি ইন্টারিম সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলাম, আপনাকে নির্বাচন দিতে হবে।
যদি নির্বাচন ডিসেম্বরে হয়, জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই—তবে মৌলিক সংস্কারগুলো আগে সম্পন্ন হওয়া দরকার। যদি মৌলিক সংস্কারের জন্য আরও দুই মাস বেশি লাগে, তাহলে ডিসেম্বরের উপর জিদ করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার মানে হয় না। সুতরাং নির্বাচন ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে হোক—জামায়াতের কোনো আপত্তি থাকবে না।
এ লক্ষ্যে আপনি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। আমরা দুটি বিষয়ের রোডম্যাপ চেয়েছি—একটি নির্বাচনের, আরেকটি সংস্কারের। আপনি আপনার মতো করেই তা ঘোষণা করুন। আমি মনে করি, তাতেই পরিস্থিতি শান্ত হবে। এক মাস বা দুই মাসের তারিখের পার্থক্য দেশের জনগণ মেনে নেবে।
তবে ঘোষণাটা অত্যন্ত জরুরি, কারণ আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। রোডম্যাপের তারিখ বা মাস নির্ধারণ করে ঘোষণা দিলে এই আস্থার সংকট কমে যাবে।
শনিবার জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে নোয়াবাজারস্থ খাদিজা হোটেল মিলনায়তনে নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মো. বেলাল হোসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত দায়িত্বশীল সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমীর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক উপজেলা আমীর ভিপি সাহাব উদ্দিন, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ ফজলুর রহমান মজুমদার, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা আমীর মাওলানা মুহাম্মদ ইব্রাহীম, উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি আব্দুর রহিম, জামায়াত নেতা আইয়ুব আলী ফরায়েজী, মাওলানা আব্দুল কাইউম, ডাঃ মফিজুর রহমান, মাওলানা আব্দুল হাকিম, আলহাজ শেখ আহমদ, মাওলানা আবুল হাশেম, কাজী আব্দুল কাদের, উজিরপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি আবুল হাসেম, ডাঃ মোশাররফ হোসেন বাহার, এ এন এম আবু তাহের, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা নুরুজ্জামান খোকন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, কালিকাপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান জাকির মাহমুদ প্রমুখ।
এ সময় শ্রীপুর, শুভপুর, কালিকাপুর ও উজিরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড, কেন্দ্র ও গ্রাম কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এমআর