বলিউড আজ এক সংকটজনক প্রতিচ্ছবির সামনে দাঁড়িয়ে। একদিকে প্রশংসিত ও সমালোচিত পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা, অন্যদিকে তার কাজের ধরনে অনীহা প্রকাশ করে ছবি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া দীপিকা পাড়ুকোন। বিষয়টা আর শুধু একটি কাস্টিং ইস্যু নয়, এটা হয়ে উঠেছে মূল্যবোধ, সীমা ও শ্রদ্ধার প্রশ্ন।
ঘটনার সূত্রপাত দীপিকার সম্ভাব্য এক ছবিতে কাজ না করার সিদ্ধান্ত থেকে। জানা যাচ্ছে, দীর্ঘ ও অনির্ধারিত শুটিং শিডিউল, ইন্টিমেট দৃশ্য নিয়ে অস্বস্তি, এবং সেটে শৃঙ্খলার অভাবে দীপিকা সরে আসেন। মাতৃত্বের পর মানসিক ও শারীরিক ভারসাম্য রাখতে গিয়ে এই অনিয়ম মানিয়ে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়া? টুইটারে নাম না করে আক্রমণ — "Dirty PR" আর "feminist ভণ্ডামি"-র অভিযোগ তুলে দিলেন। অনেকেই বলছেন, তিনি এই সমালোচনাকে বিশ্বাসঘাতকতা মনে করছেন, পেশাদার মতবিরোধ নয়।
এই বিতর্কে ভারসাম্য আনেন অজয় দেবগন। সম্প্রতি এক ছবির ট্রেলার লঞ্চে তিনি বলেন, সৎ নির্মাতাদের ৮ ঘণ্টার কাজের সময় মেনে চলতে কোনও সমস্যা হওয়া উচিত নয়। এমনকি তিনি নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের work-life ব্যালান্সের প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থনও করেন। অজয়ের মন্তব্য বলিউডের 'ওল্ড স্কুল বনাম নিউ অর্ডার'-এর দ্বন্দ্বকেই সামনে আনে।
ভাঙ্গার মতো পরিচালকরা মনে করেন, সিনেমা মানেই নিজের সর্বস্ব দিয়ে কাজ করা। প্রটোকল বা সময়ের গণ্ডি সৃষ্টিশীলতাকে আটকে দেয়। কিন্তু নতুন প্রজন্ম মনে করে, সীমা মানে অলসতা নয়, বরং টিকে থাকার এবং সম্মান বজায় রাখার কৌশল। পেশাদার আচরণ, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা—এই ভিত্তিতেই তৈরি হয় ভালো কাজ।
আজ বলিউড এমন এক সময়ে পৌঁছেছে, যখন শুধু গল্প নয়, 'কীভাবে' সিনেমা তৈরি হচ্ছে — সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। OTT-এর প্রতিযোগিতা, দর্শকের বদলে যাওয়া মনোভাব ও কনটেন্ট ক্লান্তির যুগে কাজের পরিবেশ হয়ে উঠেছে একান্ত জরুরি বিষয়। বিশেষত মহিলা শিল্পীরা চান নিরাপদ, মানবিক এবং সম্মানজনক পরিবেশ।
এটা আর শুধু দীপিকা বনাম ভাঙ্গার সংঘর্ষ নয়। এটি এক সাংস্কৃতিক রিফ্লেকশন পয়েন্ট — যেখানে প্রশ্ন উঠছে, বলিউড কি সীমারেখা মেনে পেশাদার হতে পারবে, না কি আজও শৃঙ্খলাকে 'বিশ্বাসঘাতকতা' ভাববে?
কারণ যদি সে না পারে, তাহলে শুধু তারকা নয় — হারিয়ে যেতে পারে বলিউডের আত্মা, প্রাসঙ্গিকতা এবং দর্শকের আস্থা।