কঙ্গনা রানাউত বরাবরই সাহসী। কথায়, কাজে, আর এবার নিজের রূপে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি খোলাখুলি বলেন, তার সাদা চুল দেখে পুরো ফিল্ম ইউনিটই যেন অস্বস্তিতে পড়ে যায়। যেন বয়সের ছাপ মানেই অপরাধ। এই মুহূর্তটি ভাইরাল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর ভেতরে রয়েছে বলিউডে দীর্ঘদিনের একটা গভীর বৈষম্য — বয়সভিত্তিক বৈষম্য, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।
কঙ্গনা বলেন, রাজনীতির জগতে তার কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সিনেমার দুনিয়ায় এখনো মুখই মুখ্য। তার grey চুল যেন পুরো ইউনিটের কাছে ছিল একধরনের ‘panic button’। চুলে সাদার ছোঁয়া মানেই কি একজন অভিনেত্রীর পর্দার আয়ু শেষ?
বলিউডে এখনো চলছে এক 'যৌবনপূজার সংস্কৃতি'। শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খান বা অক্ষয় কুমারদের মতো পুরুষ অভিনেতারা ৫০ পেরিয়েও প্রেমিক চরিত্রে অভিনয় করছেন। অন্যদিকে, নারী অভিনেত্রীদের ৩৫ পার হলেই যেন পর্দা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় — যদি না তারা নিজেদের একেবারে নতুন করে তুলে ধরতে পারেন। টাবু, রানি মুখার্জি বা সুস্মিতা সেন-এর মতো কয়েকজন সফল হলেও, তাদের দেখা হয় ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে, নিয়ম নয়।
এই প্রবণতা শুধু শিল্পীদের নয়, দর্শকদের দৃষ্টিভঙ্গিকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে। নারী প্রতিভার যেন একটা 'মেয়াদ' রয়েছে — বয়স বাড়লে সেটা ফুরিয়ে যায়। কঙ্গনার grey চুল আসলে কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এক শক্তিশালী বার্তা। তিনি যেন স্পষ্ট করে বলে দেন, তার মূল শক্তি তার দামী সাজে নয়, বরং তার কণ্ঠে, চিন্তায়।
তবে প্রশ্ন থেকে যায় — বলিউড কি আজও নারী চরিত্রকে প্রেমিকার গণ্ডিতে আটকে রাখে? বয়স বাড়লেই কি চরিত্র বদলে গিয়ে মা, মাসি বা মেন্টরে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়?
পরিবর্তন দরকার। দরকার এমন চরিত্র, যেখানে ৪০ বা তার বেশি বয়সী নারীরা কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকবেন — শুধু সম্পর্কের নির্ভরশীল চরিত্র নয়, বরং নিজের অভিজ্ঞতা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে জীবনের মূল চালক হবেন।
স্ক্রিনে সৌন্দর্যের সংজ্ঞাও বদলাতে হবে। বয়স, বলিরেখা, বাস্তবতা — এসবই এক ধরনের সৌন্দর্য। বয়সকে দুর্বলতা নয়, বরং চরিত্রের সম্পদ হিসেবে দেখার সময় এখনই।
শেষ কথা, বলিউড যদি সত্যিই সমতার কথা বলে, তাহলে কঙ্গনার grey hair নিয়ে অস্বস্তি নয়, প্রশংসা হওয়া উচিত। কারণ সেই সাদা চুলই এখন আয়না — যেখানে দাঁড়িয়ে ইন্ডাস্ট্রির নিজেকে নতুন করে দেখা উচিত।
এসএন