দুই যাত্রীর দ্বন্দ্ব মেটাতে গিয়ে বেদম মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন গাইবান্ধার স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম। আজ শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন গাইবান্ধা প্ল্যাটফরমে দাঁড়ালে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, ট্রেনযাত্রীদের সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও হাতে গোনা দু-একজন তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। অনেকেই মোবাইলে ভিডিও করতে ব্যস্ত ছিলেন।
কর্তব্যরত সরকারি কর্মচারীর এই লাঞ্ছনায় বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ও রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঢাকামুখী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ থাকায় বিশেষ করে এসি বগিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রেনের পুলিশ সদস্যরা ও স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম। মূলত ট্রেনের এসি বগির পাশে দাঁড়িয়ে স্টেশন মাস্টার নারী যাত্রীদের আগে নামা ও ওঠার কথা বলছিলেন।
এক পর্যায়ে দুই যাত্রীর মধ্যে ওঠা-নামা নিয়ে বাগবিতণ্ডা শুরু হলে তিনি তা করতে নিষেধ করেন।
পরে এক পুরুষ যাত্রী হঠাৎ চড়াও হয়ে তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী এগিয়ে না আসায় স্টেশন মাস্টার সামান্য প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় কিল-ঘুষি ও লাথিতে তিনি মাটিতে পড়ে যান।
মারপিটের শিকার স্টেশন মাস্টার এক পর্যায়ে বিবস্ত্র হয়ে যাওয়ার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এসি বগি ছেড়ে অন্য কম্পার্টমেন্টে যাওয়ার কথা বললে ঘটনার সময় এক যুবক ও তার সঙ্গের অনেকেই তাকে গালাগাল করে কিল-ঘুষি মারেন। তবে ওই যুবক হিংস হয়ে তাকে নিচে নামায় এবং বর্বরের মতো ক্রমাগত মারতে থাকে।
গাইবান্ধা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার আশুতোষ কুমার রায় বলেন, এসি কোচ খালি করে দেওয়ার জন্য যাত্রীদের বোঝানো হচ্ছিল। সেরকম এক সময়ে বগির উল্টো দিকের দরজা দিয়ে স্টেশন মাস্টারকে নামিয়ে মারধর করা হয়।
ভিড়ের কারণে কর্তব্যরত পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানতে পারেনি। পরে তার জানতে পারেন।
স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ রকম একটি দুঃখজনক ঘটনার শিকার হলাম। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে যাত্রীদের সেবা দিতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী হামলাকারীদের আটক করতে পারেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
গাইবান্ধা রেল স্টেশনের পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাহেব গণি বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। স্টেশন মাস্টারসহ আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। যাত্রীদের ধাক্কাধাক্কিতে বগিতে আটকে যাই। ট্রেন থেকে নামিয়ে স্টেশন মাস্টারকে যাত্রীরা মারধর করেছে। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনা জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়লে সচেতন মানুষদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে এরকম একটি ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছেন না। তারা ভাইরাল ভিডিও দেখে অপরাধীদের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।
পিএ/টিকে