২০২৪ সাল ভারতীয় ওটিটি জগতে ছিল এক বিপ্লবের বছর। চেনা ছক ভেঙে কখনো সময়চক্র, কখনো আদালতের হাস্যরস আবার কখনো তবাইফদের প্রেম-কান্না — নানা বিষয়ে নির্মিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী ও সাহসী সিরিজ। কেউ ফিরেছেন তৃতীয় মৌসুমে, কেউ বা হাজির হয়েছেন একেবারে নতুন পরিচয়ে।
প্রথমেই বলতে হয় ‘পঞ্চায়েত’ তৃতীয় পর্বের কথা। ফুলেরার রাজনীতি, আবিষেক ত্রিপাঠীর আবেগ আর গ্রামীণ জীবনের হাসি-কান্না দর্শকদের আবারো নাড়া দিয়েছে।
ভারতের জন্য নির্মিত আন্তর্জাতিক চরবৃত্তির সিরিজ ‘সিটাডেল: হানি বানি’তে বরুণ ও সামান্থার উপস্থিতি এনেছে নতুন উত্তেজনা, যা অ্যাকশন ও গোপন অভিযানে ভরা।
সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘হীরামন্ডি’ তবাইফদের জীবনের প্রেম, বিদ্রোহ আর আত্মমর্যাদার গল্প বলে গিয়েছে এক অপূর্ব চিত্রভাষায়।
‘মির্জাপুর’ তৃতীয় পর্বে গুড্ডু ও গোলুর খুনোখুনি, প্রতিশোধ ও রাজত্বের লড়াই আরও ভয়ংকর ও নাটকীয় মোড় নিয়েছে।
তবে ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’-এ দেশভাগের যন্ত্রণাময় ইতিহাস নতুন করে ছুঁয়ে গেছে দর্শকদের হৃদয়।
আনন্যা পান্ডের ‘কল মি বে’ এক ফ্যাশনমুখর তরুণীর সংগ্রাম ও আত্মপরিচয়ের খোঁজের গল্প, যা আকর্ষণীয় ও অনুপ্রেরণাদায়ক।
‘মিসম্যাচড’ এর তৃতীয় পর্বে ডিম্পল ও ঋষির সম্পর্কের ওঠানামা, স্বপ্ন ও বাস্তবতার সংঘাত আবারও তরুণ দর্শকদের মনে ছাপ ফেলেছে।
দিল্লির আদালতের মজাদার কাহিনি ‘মামলা লিগ্যাল হ্যায়’-তে রবি কিশনের রসিক নেতৃত্বে হাসি-ঠাট্টা আর বাস্তবতার মিশ্রণ দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে।
‘কিলার সুপ’–এ মনোজ বাজপেয়ী ও কঙ্কনার যুগলবন্দিতে রহস্য আর কৌতুক এক অদ্ভুত সমন্বয় সৃষ্টি করেছে।
‘ইন্ডিয়া পুলিশ ফোর্স’–এ রোহিত শেট্টির চেনা ঢঙে পুলিশি অ্যাকশন ও আবেগ দর্শকদের আবারও টানতে পেরেছে।
‘শোটাইম’-এ বলিউডের ঝকমকে পর্দার আড়ালে লুকানো রাজনীতি দেখানো হয়েছে সাহসিকতার সঙ্গে।
‘অ্যাংরি ইয়াং মেন’ আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে সেলিম-জাভেদ যুগে, যেখানে ব্লকবাস্টারের পেছনের অহং ও লড়াই উঠে এসেছে ডকু-নাটকের ছোঁয়ায়।
‘আইসি ৮১৪: দ্য কান্দাহার হাইজ্যাক’ ১৯৯৯ সালের সেই নারকীয় ঘটনার উপর নির্মিত এক রক্তচক্ষু থ্রিলার, যা দর্শকদের শ্বাসরুদ্ধ করে রেখেছে।
‘কোটা ফ্যাক্টরি’ এবারও রঙহীন কিন্তু হৃদয়বানভাবে বন্ধুত্ব, পড়াশোনা ও চাপের গল্প বলেছে।
রবীনা ট্যান্ডনের ‘কর্ম্মা কলিং’ এক জ্বলন্ত প্রতিশোধের নাটক, যা গ্ল্যামার ও গ্লানিকে একসঙ্গে মিশিয়েছে।
‘বিগ গার্লস ডোন্ট ক্রাই’–এ সাত মেয়ের বোর্ডিং স্কুল জীবন আর বড় হয়ে ওঠার কাহিনি তরুণীদের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি।
সবশেষে ‘ডক্টরস’ সিরিজে প্রতিশোধ, নৈতিকতা ও সম্পর্কের টানাপোড়েন উঠে এসেছে হাসপাতালের আবহে। শরদ কেলকার ও হারলিন সেঠির অভিনয়ে গল্পটি পেয়েছে বাড়তি শক্তি।
ফুলেরার পঞ্চায়েত থেকে হীরামন্ডির অলঙ্কারে ঢাকা গল্প, দিল্লির আদালত থেকে কান্দাহারের হাইজ্যাক পর্যন্ত — ২০২৪-এর ভারতীয় সিরিজগুলো ছিল বহুমাত্রিক, চিন্তাশীল ও সাহসী। যদি এদের কোনোটা মিস করে থাকেন, তাহলে দেখে নিতে পারেন আপনার পছন্দের সিরিজটি।
আরআর/এসএন