জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে চুলচেরা হিসাব-নিকাশ। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে সম্ভাব্য সময় নির্ধারণের পর নির্বাচনি প্রস্তুতিতে গতি এনেছে বিএনপি। ফেব্রুয়ারিকেই সামনে রেখে শুরু হয়েছে মাঠপর্যায়ের পরিকল্পনা।
এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে ইসলামপন্থি দলগুলোর অবস্থান ও তাদের সম্ভাব্য নির্বাচনি জোট। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সরব চেষ্টা চলছে একটি ‘ইসলামী ঐক্যজোট’ গঠনের। তবে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি বড় ইসলামী দলের সঙ্গে আদর্শিক পার্থক্য এখনো বড় বাধা হয়ে রয়েছে। ফলস্বরূপ একক ঐক্যের বদলে আলাদা আলাদা জোটের আভাস মিলছে।
এদিকে ইসলামী আন্দোলনসহ পাঁচটি দল সমঝোতার পথে এগোচ্ছে বলে জানা গেছে। আবার এবি পার্টির সঙ্গে এনসিপিসহ কয়েকটি দলের সম্ভাব্য ‘অ্যালায়েন্স’-এর কথাও আলোচনায় আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামপন্থিদের এই বিভক্ত প্রক্রিয়া জামায়াতের জন্য নির্বাচনে এককভাবে সুবিধা আদায় করা কঠিন করে তুলতে পারে।
বিশেষত এমন আসনগুলোতে যেখানে জামায়াতের ভোটব্যাংক শক্তিশালী, সেখানে বিএনপির প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট বিভক্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে জামায়াতের জয় পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ফলে ইসলামপন্থি ঐক্য না হলে দলটির প্রভাবশালী এলাকাগুলোতেও হোঁচট খেতে হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, তফশিল ঘোষণার পরই জোট কিংবা নির্বাচনি সমঝোতা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। তিনি বলেন, “যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদারদের নিয়েই আমরা জাতীয় সরকার গড়ার পরিকল্পনা করেছি, এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো জোট হয়নি।”
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “ইসলামী ঐক্য গঠনের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কে প্রার্থী হবে, নির্বাচন কীভাবে হবে—এসব বিষয় স্পষ্ট না হওয়ায় আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাইনি।”
এদিকে এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, তারা এখনো স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে। তবে জাতীয় স্বার্থে, বাস্তব প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন হলে আদর্শ ও কর্মসূচির মিল থাকলে জোটের বিষয়টি নাকচ করে না এনসিপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তিনটি দলই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ কৌশলগত ফ্রন্টও গঠন করতে পারে। তাঁর মতে, “তারেক রহমান আগেই জানিয়েছেন—গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোকে নিয়েই সরকার গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।”
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনীতির অঙ্ক জটিল হচ্ছে। একদিকে ইসলামী ঐক্য, অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য জোট—সব মিলিয়ে ২০২৫ সালের নির্বাচন হতে চলেছে বহুমাত্রিক কৌশলের এক লড়াই।
টিকে/টিএ