বলিউডে একদিকে যখন বড় বাজেটের বাণিজ্যিক ছবি বক্স অফিস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন অন্যদিকে চুপচাপ এক প্রযোজনা সংস্থা তৈরি করছে এমন কিছু ছবি, যেগুলো শুধু বিনোদন নয়, বরং সমাজকে ভাবায়, প্রশ্ন তোলে আর কিছু ভুলে থাকা মানুষদের গল্প শোনায়। এই সংস্থার নাম আমির খান প্রোডাকশনস। আর এর নেপথ্যে দাঁড়িয়ে আছেন বলিউডের ‘পারফেকশনিস্ট’ খ্যাত অভিনেতা আমির খান।
২০০১ সালে ‘লগান’ দিয়ে শুরু হয়েছিল যাত্রা। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক দল কৃষকের ব্যাট-প্যাড হাতে বিদ্রোহ শুধু বক্স অফিসেই ঝড় তোলেনি, পৌঁছে গিয়েছিল অস্কার মনোনয়ন পর্যন্ত। তারপর একে একে ‘তারে জমিন পর’, ‘ধোবি ঘাট’, ‘পিপলি লাইভ’, ‘সিক্রেট সুপারস্টার’— প্রতিটি ছবি ভেঙেছে প্রচলিত ধারার গণ্ডি।
‘তারে জমিন পর’-এ আমির নিজেই ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে এক ডিসলেক্সিক শিশুর চোখ দিয়ে বাবা-মা আর শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি এক নির্মম অথচ আবেগঘন প্রশ্ন তুলে ধরেছিলেন। এই সিনেমা ভারতীয় শিক্ষা ও পিতামাতার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেওয়ার মতো আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
‘ধোবি ঘাট’ আর ‘পিপলি লাইভ’-এর মতো ছবি বলিউডে মূলধারার বাইরের সাহসী চিত্রনাট্য কতটা জায়গা পেতে পারে, তার উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে প্রমাণ করেছে যে AKP শুধু তারকাখচিত গল্পে নয়, বরং বাস্তব, কঠিন, সমাজমুখী বিষয়েও আগ্রহী।
‘দিল্লি বেলি’-র মতো সাহসী ও রুক্ষ কমেডির সাহসও দেখিয়েছে এই সংস্থা। আর ‘জানে তু ইয়া জানে না’ প্রজন্মের প্রেম আর বন্ধুত্বের সংজ্ঞা নতুন করে লিখে দিয়েছিল।
নারীস্বাধীনতা ও স্বপ্নের পেছনে ছোটার গল্প বলতে গিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘সিক্রেট সুপারস্টার’, যেখানে এক কিশোরীর গানে মিশে গিয়েছিল পরিবারের গলা চেপে ধরা কণ্ঠ।
এবার তাদের সর্বশেষ চমক ‘লাপাতা লেডিজ’। ২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে গ্রামীণ সমাজে বিয়ের দিনে হারিয়ে যাওয়া দুই নারীর চোখ দিয়ে নারীস্বাধীনতা, আত্মপরিচয় আর সামাজিক কাঠামোর ভেতর লুকিয়ে থাকা সংকোচকে তুলে ধরা হয়েছে নিপুণ দক্ষতায়। কিরণ রাও পরিচালিত এই ছবিটি ২০২৫ সালের অস্কারে ভারতের অফিসিয়াল এন্ট্রি হিসেবেও মনোনীত হয়েছে।
আমির খান প্রোডাকশনস এর এই যাত্রা প্রমাণ করে দেয়, বলিউডে শুধুই স্টারডম নয়, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতা, মানবিক গল্প আর নতুন কণ্ঠের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকলেও বিশ্বমঞ্চে পৌঁছানো যায়।
এসএন