গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ। যদিও এ ম্যাচে জয়ের সুযোগ ছিলো টাইগারদের সামনে। চতুর্থ দিনের শেষে নাঈম হাসানও জানিয়েছিলেন একই কথা। তবে মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত’র ব্যাটে এমন কিছু একেবারেই ফুটে ওঠেনি। খেলা দেখে এমন মনে হয়েছে যে, পুরো বাংলাদেশ সেদিন জয়ের চেষ্টাটাই করেনি
তবে এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি বলেছেন, ড্রেসিংরুমে থাকা কেউই ব্যক্তিগত মাইলফলকের জন্য খেলেন না।
গল টেস্টের ফলাফল দুই দিকেই যেতে পারতো। উইকেট বিবেচনায় বাংলাদেশের যেমন জয়ের সম্ভাবনা ছিলো, তেমনি শ্রীলঙ্কারও জয়ের সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু টাইগারদের হারের সম্ভাবনা একেবারেই কম ছিলো। এমন অবস্থায় দিনের শুরুতে টাইগার ব্যাটাররা কীভাবে ব্যাটিং করেন, সেটাই ছিলো বড় প্রশ্ন। আগের দিন বিকেলের মতো দেখেশুনেই ব্যাট করছিলেন শান্ত-মুশফিক। মাঝে ছিলো বৃষ্টির হানা, যে কারণে ম্যাচটা তখন এগোচ্ছিলো ড্রয়ের দিকেই।
বৃষ্টি শেষ হলে সেঞ্চুরি করেন শান্ত। তারপর ৬ উইকেটে ২৮৫ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তখন বাকি ছিলো মাত্র ৩৭ ওভার, শ্রীলঙ্কাকে জিততে হলে এই ওভারের মধ্যেই করতে হতো ২৯৬ রান। ওভারপ্রতি স্বাগতিকদের রানের প্রয়োজন ছিলো ৮ করে। টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চম দিনের উইকেটের বিবেচনায় লঙ্কানদের জন্য সমীকরণটা একটু কঠিনই ছিলো বটে। যে কারণে স্বাগতিকরাও কোনো ঝুঁকি নিয়ে খেলেনি, তারাও চেয়েছিলো ম্যাচটা ড্র করতে। তবুও শেষ বিকেলে শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন নাঈম ও তাইজুল।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, আর একটু আগে ইনিংস ঘোষণা করলে স্বাগতিকদের অলআউট করার একটা সুযোগ থাকতো। অনেকের ধারণা, মুশফিক ও শান্ত নিজেদের ব্যক্তিগত মাইলফলকের জন্যই ঝুঁকি নেয়নি। তবে এমন অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন শান্ত।
‘আমি যেটা বলতে চাই, আমি এটার নিশ্চয়তা দিতে পারি এই ড্রেসিংরুমে কেউ ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য খেলে না। মুশফিক ভাই এত বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন, ওই এক রান নিয়ে আমার মনে হয় না উনি অনেক বড় কিছু অর্জন করে ফেলতেন। উনি আমাদের দলের জন্য কত কিছু করেছেন এটা আমরা সবাই জানি। সুতরাং, আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সত্যি বলতে বৃষ্টির কারণে ওই পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’
শান্ত মনে করেন, ড্রেসিংরুমের অবস্থা না জেনে এসব মন্তব্য না করাই ভালো। ‘আমি একটা জিনিস বলবো যার যার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে সবাই তার মত দিতে পারেন। এটা নিয়ে কোনো অসুবিধা নেই। যার যার জায়গা থেকে মনে হতেই পারে ইনিংস ঘোষণা করা উচিত ছিলো বা আরেকটু ঝুঁকি নেয়া উচিত ছিলো। এটা ঠিক আছে।’ ‘কিন্তু আমার মনে হয় না কেউ না জেনে বা ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা না বুঝে সরাসরি বলতেছে ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য খেলেছে। এই জিনিসটা আসলে না বলাটা আমার মনে হয় ভালো, কারণ আমি আসলে জানি না যে ওই মানুষটার মধ্যে আসলে কি আছে, সে কি দলের জন্য খেলছে নাকি সে নিজের জন্য খেলছে।’
গলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিন পর্যন্ত উইকেটে ব্যাটারদের জন্য বাড়তি সুবিধা থাকবে এটা অনুমেয়ই ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। বেশ কিছু বড় টার্ন দেখা গেলেও ব্যাটারদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেনি। এজন্যই দ্রুতই ইনিংস ঘোষণার ঝুঁকি নিতে চায়নি বাংলাদেশ। তবে সফরকারীদের পরিকল্পনা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে গলের বৃষ্টি।
শান্ত বলেন, ‘উইকেটটা খুব বেশি একটা পরিবর্তন হচ্ছিল না পঞ্চম দিনে এসে, গল যে-রকম আমরা সবসময় চিন্তা করি। ওই কারণে আমরা কিন্তু ওইভাবে ওই সময় ইনিংস ঘোষণা করতে পারিনি এবং পাশাপাশি বোলিং অ্যাটাকটা একটু অনভিজ্ঞ ছিলো। আমার হাতে যদি তাসকিন বা মিরাজ থাকতো তাহলে হয়তো ভিন্ন একটা কম্বিনেশন হতো। কিন্তু যেই বোলাররা খেলেছে তারা দারুণ বল করেছে। শুধুমাত্র কন্ডিশনের কারণে আমরা ওই ঝুঁকি নিতে পারিনি। কিন্তু বৃষ্টি যদি না হতো হয়তো আমরা ভিন্ন পরিকল্পনায় যেতাম।’
ইউটি/এসএন