খেলার মাঠ শুধু প্রতিযোগিতার স্থান নয়, তা একেকটি মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। হার-জিতের বাইরেও সেখানে আছে আত্মত্যাগ, সাহস, ভালোবাসা আর জেদ। সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দি সিনেমায় এমন কিছু চরিত্র উঠে এসেছে, যারা কেবল ক্রীড়াবিদ নয়, বরং জীবনসংগ্রামে জয়ী যোদ্ধাও। এই সব চলচ্চিত্রে কাহিনি গড়ে উঠেছে বাস্তব জীবনের বীরদের ঘিরে, যাদের গল্পে চোখের কোণে পানি আর হৃদয়ে প্রেরণার ঝড় উঠে।
এই তালিকায় সবার আগে উঠে আসে ‘কৌন প্রবীণ তাম্বে?’ সিনেমার নাম। ৪১ বছর বয়সে আইপিএলে অভিষেক, তাও একটি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ না খেলে—প্রবীণ তাম্বের জীবনের এই গল্প পর্দায় তুলে ধরেছে এক অনবদ্য আত্মবিশ্বাসের জয়।
দৌড়, কান্না আর দেশভাগের বেদনা বুকে নিয়ে যে মানুষটা হয়ে উঠেছিলেন "দ্য ফ্লাইং সিখ", তাঁকে নিয়েই নির্মিত হয়েছে ‘ভাব মিলখা ভাব’। সেখানে মিলখা সিংয়ের চরিত্রে ফারহান আখতার যেন নিজেই রূপ নেন এক দৌড়বিদে।
‘চক দে! ইন্ডিয়া’ সিনেমায় শাহরুখ খানের কোচ চরিত্রটি যেন জাতীয় আবেগের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারী হকি দলকে ঘিরে গড়ে ওঠা গল্পটি শুধু খেলার কৌশল নয়, বরং জাতীয় সম্মান ফেরানোর এক নিরব যুদ্ধ।
‘ইকবাল’ সিনেমার শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ছেলেটি যেন এক প্রতীক, যিনি সকল সীমাবদ্ধতা টপকে জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে চায়। সেখানে তার পাশে দাঁড়ান কোচের ভূমিকায় নাসিরউদ্দিন শাহ।
‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ সিনেমায় সুশান্ত সিং রাজপুত যেন ধোনিকে ছাপিয়ে নিজের আলাদা ছাপ রেখে গেছেন। একটি টিকিট চেকারের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প এই সিনেমায় উঠে এসেছে নিপুণভাবে।
‘মুক্কাবাজ’-এ এক বক্সারের সামাজিক বাধা, প্রেম ও রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের জায়গা করে নেওয়ার গল্পও হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
‘ময়দান’ সিনেমায় উঠে এসেছে ভারতের এক বিস্মৃত ফুটবল কোচ রহিম স্যারের গল্প, যাঁর কৌশলে একসময় এশিয়ার শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছিল ভারত।
‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’ সিনেমায় কার্তিক আরিয়ান হয়ে ওঠেন মুরলীকান্ত পেটকার—ভারতের প্রথম প্যারা অলিম্পিকস স্বর্ণপদকজয়ী, যাঁর জীবনে লুকিয়ে আছে যন্ত্রণা আর জয় করার অদম্য ইচ্ছা।
‘ঘুমর’ সিনেমায় এক হাতে খেলা এক স্পিনার আর তাঁর কোচের মধ্যকার সম্পর্ক এবং জীবনের দ্বিতীয় সুযোগ যেন দর্শককে শেখায়, কিছুই অসম্ভব নয়।
অবশেষে, ‘৮৩’ সিনেমায় কাপিল দেবের ভূমিকায় রণবীর সিং তুলে ধরেন ভারতের প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত — যা ছিল একটি জাতির সম্মান ফেরানোর গল্প।
এই সিনেমাগুলোর প্রতিটি চরিত্র যেন একেকজন জীবন্ত অনুপ্রেরণা। এইসব গল্প আমাদের শেখায়—লড়াই ছাড়া কিছুই অর্জনযোগ্য নয়।
পিএ/এসএন