দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ার আফ্রি সেলিনার। বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে অভিনয় করেছেন নাটকে, এমনকি তাকে দেখা গেছে সিনেমাতেও। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি চলে গেছেন লাইমলাইটের বাইরে।
জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে লন্ডনে অবস্থান করছেন অভিনেত্রী।
গণমাধ্যমকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় অভিনেত্রী জানালেন, দেশের বাইরে থাকলেও আফ্রি বর্তমানে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে অসংখ্য থ্রেট পাচ্ছেন তিনি, যার কারণে জীবন নিয়ে এই মুহূর্তে শঙ্কায় রয়েছেন।
ভিডিও বার্তার শুরুতে নিজের পরিচয় দিয়ে আফ্রি সেলিনা বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি আফ্রি সেলিনা। কিছু কথা শেয়ার করার জন্যই এই ভিডিওটা করা।’
এরপর তিনি বললেন, ‘দেশ ছেড়ে দেশের বাহিরে চলে আসার পেছনে দেশই দায়ী ছিল। জানি না কিসের জন্য বা কোথা থেকে; হয়তো বা ৫ আগস্টের পর আমার দুইটা ভিডিও আমাকে এই পরিণতিতে এনে দিয়েছে। যেই জায়গা থেকে আমি এটা করেছিলাম সেটা ছিল, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে একটা প্রশ্নের উত্তর জানা। এটাই যখন এত বড় একটা ভুল হয়েছে, তখন আজকে বুঝতে পারছি যে কী করলাম!’
সেই ভিডিওর কারণে এখন পর্যন্ত বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলেও জানালেন এই অভিনেত্রী।
বললেন, ‘ওটাকে (ভিডিও) কেন্দ্র করে, ট্রিগার করে আমাকে এত এত বুলিং করা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ব্যক্তিগত নাম্বার থেকে এত ট্রিগার করা হয়েছে, বুলিং করা হয়েছে যার কোনো কিছুই নেওয়া যাচ্ছিল না। আর নিতে পারছিলাম না। সেই জায়গা থেকে দেশ ছেড়ে আমি এখন বিদেশের মাটিতে।’
জীবনের নিরাপত্তা চান, সসম্মানে দেশে ফিরতে চান জানিয়ে আফ্রি সেলিনা সর্বশেষে বলেন, ‘দেশে আমার অনেক কষ্টের ক্যারিয়ার, এই ক্যারিয়ার অনেক তিলে তিলে গড়েছি। সেই জায়গা থেকে একদমই ইচ্ছে নেই নিজের ক্যারিয়ার ফেলে আরেক দেশে এসে চুপ করে থাকার, পালিয়ে থাকার।
ফিরব তো কোথায় ফিরব? যেখানে ইনসিকিউরিটিজ, যেখানে জানের ভয়, যেখানে হুমকি-ধমকি যে দেশে ফিরলে গুম করে ফেলবে! বাজারে নিলাম করে ফেলবে! নিজেকে প্রশ্ন করেছি, এমন কী-ই বা করেছিলাম? কিছুদিন আগে যখন নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখলাম তখন অবাক হইনি। কারণ বুঝতেছিলাম, আমার মত এ রকম অনেক শিল্পীই হয়তো এ রকম বাজে হ্যারাসমেন্টের শিকার হবে। এটা বুঝতে পারছিলাম, যার কারণে একদমই অবাক হইনি। এভাবে নিজের দেশ ছেড়ে, ক্যারিয়ার ছেড়ে আরেক দেশে এসে থাকাটা একদমই ঠিক মনে করছি না। তাই দেশে ফিরতে চাই, নিরাপত্তা চাই। সেই সাথে চাই সম্মান এবং অবশ্যই এই ভয়-ভীতি থেকে বাঁচতে চাই। নিরাপত্তাহীনতায় বাঁচতে চাই না। সবাইকে ধন্যবাদ।’

সেই সঙ্গে সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না। শিল্পচর্চাটাই করে গেছি। শুধু জুলাই আন্দোলনের সময় একজন সচেতন মানুষ হিসেবে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে দু-একটা প্রশ্ন করেছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটুকু অধিকারও কি একজন নাগরিক হিসেবে আমার নেই? কিন্তু সেই থেকে শুরু হয় আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি। আমার কমেন্ট বক্সে হত্যার হুমকি, শ্লীলতাহানির হুমকিসহ নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হয়। একটা পর্যায়ে সেটা চলে আসে আমার ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হচ্ছিল যে, আমি আর দেশে থাকতে পারিনি। বাধ্য হয়ে লন্ডনে পাড়ি জমাই।’
উল্লেখ্য, দিল্লিতে জন্ম হলেও পাঁচ বছর বয়সে বাংলাদেশে চলে আসেন আফ্রি সেলিনা। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অন্যপথ’। নাঈম তালুকদারের পরিচালনায় এই ছবিতে আফ্রি অভিনয় করেছিলেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের বিপরীতে। তবে ছবিটির কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এরপর অনন্য মামুন নির্দেশিত আনিসুর রহমান মিলনের বিপরীতে ‘রোমান্স’ চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়া ইদ্রিস হায়দার নির্দেশিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নীল ফড়িং’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন আফ্রি।
সর্বশেষ তাকে দেখা গেছে বাংলাদেশ ও লন্ডনের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘বিফোর আই ডাই’ সিনেমায়। মিনহাজ কিবরিয়া পরিচালিত এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন বিট্রিশ অভিনেতা ইফতেখার আহমেদ।
পিএ/টিকে