অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিআই)–২০২৫ বা এ বছরের শান্তি সূচক প্রকাশ করেছে। এ সূচকে গতবারের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১২৩। চলতি বছরের জুন মাসেই এ সূচকটি প্রকাশিত হয়।
আইইপি হলো ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস নামক একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
তারা বিশ্ব শান্তি সূচক প্রকাশ করে থাকে। এই সূচকটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থা পরিমাপ করে।
আইইপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক শান্তি সূচকে ২.৩১৮ স্কোর নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩তম স্থানে। গত বছর ১৬৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৯৩তম স্থানে।
২.৪৪৩ স্কোর নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে ১২৮তম স্থানে। অর্থাৎ শান্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
আইইপি জানায়, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির মধ্যেই বৈশ্বিক শান্তির গড় স্তর ০.৩৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, বিশ্ব দিন দিন কম শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠছে এবং এই অস্থিরতা অনেক সময় বড় ধরনের সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়।
আইইপি বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শান্তির এমন অবনতি আর দেখা যায়নি।
গত ১৭ বছরে গড় দেশভিত্তিক শান্তি সূচক ৫.৪ শতাংশ কমে গেছে, যা ২০০৮ সাল থেকে বৈশ্বিক শান্তির ধারাবাহিক পতনের ইঙ্গিত দেয়। তবে কিছু আশাব্যঞ্জক দিকও রয়েছে—চলতি বছরে ৭৪টি দেশের শান্তি সূচকে উন্নতি দেখা গেছে।
আইসল্যান্ড টানা ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশের মর্যাদা ধরে রেখেছে এবং বৈশ্বিক শান্তির মানদণ্ড স্থাপন করে চলেছে।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চল টানা দশম বছরের মতো সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৫-এর সর্বনিম্ন ১০টি দেশের মধ্যে চারটিই এই অঞ্চলের।
শান্তি সূচকে বরাবরের মতো তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। সূচক অনুযায়ী, প্রথম স্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড যার স্কোর ১.০৯৫, ২য় আয়ারল্যান্ড স্কোর ১.২৬০, ৩য় নিউজিল্যান্ড স্কোর ১.২৮২, ৪র্থ অস্ট্রিয়া স্কোর ১.২৯৪, ৫ম সুইজারল্যান্ড স্কোর ১.২৯৪, ৬ষ্ঠ সিঙ্গাপুর স্কোর ১.৩৫৭, ৭ম পর্তুগাল স্কোর ১.৩৭১ , ৮ম ডেনমার্ক স্কোর ১.৩৯৩, ৯ম স্লোভেনিয়া স্কোর ১.৪০৯ এবং ১০ম ফিনল্যান্ড স্কোর ১.৪২০। সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ পাঁচ দেশ হলো- সুদান, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন ও আফগানিস্তান।
গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্সে সবচেয়ে বেশি অবনতি বাংলাদেশের
২০২৫ সালের গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্সে শান্তিপূর্ণতার সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। ৩৩ ধাপ নিচে গিয়ে ১২৩তম অবস্থানে অবস্থান করছে, যা এই সূচকের শুরু থেকে সর্বনিম্ন র্যাংকিং। ২০২৩ সালে কিছু উন্নতি হলেও, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সামগ্রিক স্কোর ১৩.২ শতাংশ কমেছে। শান্তিপূর্ণতার পতনের প্রধান কারণ ছিল ব্যাপক নাগরিক অসন্তোষ, যা পরবর্তীতে সরকারি কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রাণঘাতী সহিংসতায় রূপ নেয়। ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন শেষ করার দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন এবং দেশত্যাগ করেন। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়, তবে বিরোধী গোষ্ঠী, ছাত্র আন্দোলন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ক্ষমতার পরিবর্তন এখনও অনিশ্চিত।
গত বছর বাংলাদেশ ছাত্রদের ব্যাপক বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবনতি দেখা যায়। তৎকালীন আওয়ামী সরকার নিরাপত্তা বাহিনী ও অন্যভাবে মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। এসময় ব্যাপক সহিংসতা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে। অনেক নিখোঁজের অভিযোগও উঠে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ এর আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলছে, এ সংখ্যা এক হাজার ৪০০ জন।
বাংলাদেশ ছাড়াও শান্তি সূচকে সবচেয়ে বেশি পেছানো দেশগুলো হলো–ইউক্রেন, রাশিয়া, মিয়ানমার, কঙ্গো।
এসএম/টিকে