জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে প্রতিদিন আড়াই হাজার কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে শনিবারের (২৮ জুন) মধ্যে আলোচনা করে এর সমাধান চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ ছাড়া আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তাদের আজকের (শনিবার) মধ্যে আন্দোলন প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান তারা।
শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে এনবিআরের বর্তমান অচলাবস্থার প্রভাব তুলে ধরতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, বিসিআই, আইসিসি বাংলাদেশসহ দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো।
আন্দোলনের কারণে চলমান অচলাবস্থায় উদ্বেগ জানিয়ে ব্যবসায়ী নেতা ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘সরকার চলমান অচলাবস্থার কারণে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সঠিক গুরুত্ব বুঝছে না। [আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে] এই মিটিং মঙ্গলবার ডাকা হয়েছে কেন, আজই আলোচনা করে এর সমাধান হতে হবে।
তিনি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ কারণে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ আমদানি ও রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, চলমান স্থানীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা চাপে আছেন। নতুন করে এনবিআরের অচলাবস্থার কারণে তাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যাবে।
এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী এ থেকে ফিরে আসা উচিত, বলেন তিনি।
এনবিআর শাটডাউনের কারণে আমদানি-রপ্তানির ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ করে লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার আমাদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। যুদ্ধ ছাড়া কোন দেশের কাস্টমস বন্ধ থাকে, এটা আমাদের জানা নেই।
তিনি আরো বলেন, এনবিআরে অনেক সৎ অফিসার আছেন।
বর্তমান সংস্কারের ফলে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটি বলার অধিকার তাদের আছে। আমরা এনবিআরের সংস্কার চাই। তবে এনবিআরের অফিসারদের ভবিষ্যৎ কী, সে বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, যেকোনো দেশের সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের মিথস্ক্রিয়া (ইন্টারেকশন) অতীব জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে এ বেসরকারি খাতের সংলাপ কিংবা ইন্টারেকশন স্তিমিত।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পোর্টে, বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য পড়ে থাকায় বৃষ্টি-রোদে নষ্ট হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে কোনো রকম শর্ত ছাড়া আন্দোলনকারীদের কাজে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সংকট কাটাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা বলেন, কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা বাদে সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের চলমান অচলাবস্থা নিরসনে মঙ্গলবারে বৈঠকে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আলোচনায় বসতে চাই, মঙ্গলবারের বৈঠকে যোগ দিতে প্রস্তুত। তবে এখনও বৈঠকের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। বলেন, আমাদের সঙ্গে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, তবে এনবিআরের ১৬ জন সদস্য অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেছেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানকে অপসারণ দাবিতে আজ পূর্বঘোষিত পূর্ণ কর্মবিরতি এবং 'মার্চ টু এনবিআর' কর্মসূচি পালন করছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
এ মাসের শুরু থেকে আন্দোলনরত কর্মকর্তারা কর, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়গুলোতে কর্মবিরতি, অনশন ও মানববন্ধন করে আসছেন। ফলে এসব সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
গত ১২ মে সরকারের এক অধ্যাদেশ জারির পর এই আন্দোলন শুরু হয়। ওই অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতিনির্ধারণ বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
উল্লেখ্য, আজ থেকে শুরু হওয়া এনবিআর কর্মকর্তাদের কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কেবল আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কার্যক্রম সচল আছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর অফিসেও সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কেএন/টিকে