বুলাওয়ায়োর মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের আকাশে নতুন নক্ষত্রের ঝলক। বয়স মাত্র ১৯। নাম লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তাঁর নাম নিয়ে আগেই কানাঘুষো চলত—এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই বাজিমাত করে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি এসেছেন রেকর্ড ভাঙতে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে যখন ব্যাট হাতে নামলেন, দল তখন বিপদে। ২৩ রানে ৩ উইকেট পড়ে গেছে। এরপর ৫৫ রানে ৪ উইকেট। চারদিকে চাপ, শঙ্কা—কিন্তু প্রিটোরিয়াসের ব্যাটে যেন অন্য গল্প। ভয়হীন, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রীতিমতো ঝড় তুললেন। ১৬০ বলে করলেন ১৫০ রান। ইনিংসে ১১টি চার, ৪টি ছক্কা। যেন এক বিস্ফোরক বার্তা—“আমি এখানে রেকর্ড ভাঙতে এসেছি!”
এতেই শেষ নয়। ১৯ বছর ৯৩ দিনে ১৫০ রানের ইনিংস খেলে টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেকে দেড়শ করার রেকর্ড গড়লেন। ভাঙলেন পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদের ৪৯ বছরের পুরনো রেকর্ড—যিনি ১৯ বছর ১১৯ দিনে করেছিলেন ১৬৩ রান।
এবার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির মালিকও প্রিটোরিয়াস। এই রেকর্ড এতদিন ছিল জ্যাক রুডলফের দখলে, যিনি ২১ বছর বয়সে বাংলাদেশের মাটিতে করেছিলেন ২২২ রান। শুধু তাই নয়, সব টেস্ট মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরিয়ানও এখন তিনি। ভেঙে দিয়েছেন কিংবদন্তি গ্রায়েম পোলকের রেকর্ড।
গতির দিক থেকেও তিনি অপ্রতিরোধ্য। অভিষেকে ১১২ বলে শতরান—দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে দ্রুততম। ১৫৭ বলে দেড়শও দেশের মধ্যে দ্রুততম। আগের রেকর্ড এবি ডি ভিলিয়ার্সের—১৬২ বলে। বিশ্ব ক্রিকেটে অভিষেকে সবচেয়ে কম বলে দেড়শ করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তিনি এখন দ্বিতীয়। এক নম্বরে ভারতের শিখর ধাওয়ান।
প্রিটোরিয়াসের আরেকটি বিরল কীর্তি—২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথম শ্রেণির অভিষেকে করেছিলেন সেঞ্চুরি, এবার টেস্ট অভিষেকেও। এর আগে এমন কীর্তি গড়েছেন মাত্র তিনজন—গুন্ডাপা বিশ্বনাথ, ডার্ক ওয়েলহ্যাম ও পৃথ্বি শ।
ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের সঙ্গে ৯৫ রানের জুটি গড়ে আবারও ইতিহাস লিখেছেন প্রিটোরিয়াস। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের মধ্যে এটাই এখন সর্বোচ্চ জুটি। পেছনে ফেলেছেন ১৯৯২ সালে করা হাডসন ও কুপারের ৯২ রানের রেকর্ড।
বুলাওয়ায়োর মাঠে এক অনন্য অধ্যায় লিখে গেলেন প্রিটোরিয়াস। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট হয়তো এই তরুণের হাত ধরেই দেখতে পাবে এক নতুন ভোর।
এফপি/এস এন