জুলাই সনদে স্বাক্ষর নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর : আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম, শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাত বার্ষিকীতেই আমরা সকলে মিলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব। কিন্তু কাজটি সম্ভব হবে কি-না, সেটা নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। তবে এই জুলাই মাসের মধ্যেই আমাদের জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়ার একটি পরিণতির মধ্যে যেতে হবে।’

তিনি বলেছেন, ‘গত সাত দিন ধরে আমরা আলোচনা করেছি।

বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি হলেও সত্যি কথা হচ্ছে, আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা খানিকটা পিছিয়ে আছি।’

রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়ে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফায় সপ্তম দিনের মতো দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।

এছাড়া, কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন- বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।

আজ আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেওয়ার সময় কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন আপনাদের প্রতিপক্ষ নয়। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সরকারের অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার পরিপ্রেক্ষিতে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে কমিশনকে বিভিন্ন বিষয়ে নমনীয় হতে হয়েছে। এর একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে এই যে, আপনারাই আসলে জনগণের একটা বিরাট অংশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। আর আপনাদের মধ্য দিয়েই এক সময় দেশ শাসিত হবে।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে এবং সেগুলো আমরা ধারণ করার চেষ্টা করেছি। কেননা আলোচনার মধ্যে আমাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে হবে।
আর একদিন পরই জুলাই এবং জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদে উপনীত হওয়ার জন্য কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাত বার্ষিকীতেই আমরা সকলে মিলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব। কিন্তু কাজটি সম্ভব হবে কি-না, সেটা নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। তবে এই জুলাই মাসের মধ্যেই আমাদের জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়ার একটি পরিণতির মধ্যে যেতে হবে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি একটি বিশাল ব্যাপার। ভবিষ্যতে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে যেন কোনো রকম সংবিধান সংস্কার না হয়। বিষয়টিকে সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা দরকার। বর্তমানে ব্যক্তির ক্ষমতা সীমিত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, কারণ এর আগে শেষ পর্যন্ত শাসনের ক্ষেত্রে একটি ব্যক্তিতান্ত্রিকতা সৃষ্টি হয়েছিল এবং ভবিষ্যতেও সে আশঙ্কা আমরা উড়িয়ে দিতে পারছি না। তাই সাংবিধানিকভাবে, আইনি ব্যবস্থার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মাধ্যমে এ রক্ষাকবচগুলো আমাদের তৈরি করতে হবে।

জুলাই শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কত নিপীড়ন, কত প্রাণ, আপনাদের নিজেদের কত কর্মীর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আমরা আজ এখানে এসেছি। আমাদের একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। এটি আমাদের দায়, আমাদের দায়িত্ব।

সকলের ওপরে যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, সেটি পালন করতে কেউ যেন কুণ্ঠিত না হয়- সে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সেই শহীদ, আহত ও নির্যাতিত মানুষগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করার এটাই একমাত্র উপায়।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে আজকের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণকল্পে স্বতন্ত্র কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়ে অধিকতর আলোচনা হবার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন (বুধবার) কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার শেষে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে তিন দিন বিরতি দেওয়া হয়।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাড় দিয়ে, এগিয়ে এসে রাষ্ট্রকল্যাণের স্বার্থে নূন্যতম বিষয়গুলোতে ঐকমত্য গড়ে জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত জুলাই সনদ তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘দ্য কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর অর্ডিন্যান্স’ এর খসড়া অনুমোদন Jun 30, 2025
img
সচেতন না হলে করোনা ও মশা বিপদের কারণ হবে : চসিক মেয়র Jun 30, 2025
img
তামন্না ভাটিয়ার সিনেমায় রঙিন প্রত্যাবর্তন! Jun 30, 2025
img
লাইফ সাপোর্টে অভিনেত্রী শাওনের মা Jun 30, 2025
img
সাহসিকতার জন্য ইরানের সেই নারীকে পুরস্কৃত করলো ল্যাটিন আমেরিকার দেশ Jun 30, 2025
img
ছেলের সাফল্যে গর্বিত অমিতাভ, অভিষেককে জানালেন ভালোবাসা Jun 30, 2025
img
শেষ পর্যন্ত রাশিয়াকে শান্তি আলোচনায় বসতেই হবে- কেয়ার স্টারমার Jun 30, 2025
img
উমামা এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছেন : মির্জা আব্বাস Jun 30, 2025
img
আসিফের অস্ত্র কেনার টাকার উৎস জানতে চাইলেন সায়ের Jun 29, 2025
img
ঘর থেকে বের করে আওয়ামী লীগ নেতাকে খুন Jun 29, 2025
img
বিতর্ক পেরিয়ে পাকিস্তানে বাজিমাত দিলজিতের ‘সর্দারজি থ্রি’ Jun 29, 2025
img
ডিএমপির পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার ৭ কর্মকর্তার একযোগে বদলি Jun 29, 2025
img
ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি-সম্পাদকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা Jun 29, 2025
img
‘উপজেলা পর্যায়ের সব খেলোয়াড় থাকবে বিসিবির ডেটাবেজে’ Jun 29, 2025
img
আদিভি শেশের ‘ডাকইত’ প্রেম ও প্রতিশোধের আবেগঘন লড়াই Jun 29, 2025
দীর্ঘ চার বছর পর অবশেষে মেসির পাওনা পরিশোধ করছে বার্সেলোনা Jun 29, 2025
img
জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা ১৭ বছর নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি: মিলন Jun 29, 2025
img
চুম্বনের দৃশ্যে নায়কের মুখে দুর্গন্ধ, শুটিংয়ের পর অসুস্থ অভিনেত্রী Jun 29, 2025
img
টিকটক-ফেসবুকের ছলে ৫ মাসে সংসার ছাড়া ৫০০ বিবাহিত নারী Jun 29, 2025
img
দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে যে রেকর্ড গড়লেন মহারাজ Jun 29, 2025