জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভেতরে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও টকশো উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, লন্ডনে অনুষ্ঠিত দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকের পর নেতাকর্মীদের মধ্যে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, তা এখন ক্রমশ মলিন হয়ে যাচ্ছে।
সাংবাদিক জিল্লুর রহমান মনে করেন, ১৩ জুন লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠকের পর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করেছিলেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং দল বিজয়ী হবে। তবে তিনি সেই সময়ই এই ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন।
তার মতে, দলের মধ্যে এবং বাইরে থেকে বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক চিত্র তৈরি করা হয়েছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান যথেষ্ট জটিল এবং বিভ্রান্তিকর। তিনি উল্লেখ করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং অনুপাতভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের যে দাবি উঠছে, তা মূলত জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল হতে পারে।
এই বিশ্লেষকের মতে, বিএনপির নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ এখন যে অবস্থা আছে তাতেই সন্তুষ্ট।
ক্ষমতায় যাওয়া রাজনীতি করা, দেশের মানুষের সেবা করা, দলটাকে আরো শক্তিশালী করার চাইতে তাদের ব্যক্তিগত লাভ, ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকেই বেশি মনোযোগী।
জিল্লুর আরো বলেন, বিএনপির যারা একসময়কার রাজনৈতিক মিত্র ছিল, তারাও এখন দূরত্ব তৈরি করছে। জামায়াত, হেফাজত ও ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলো একটি বিকল্প ইসলামি প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা করছে, যেখানে বিএনপির অবস্থান বেশ দুর্বল।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীন ও ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রভাব নিয়েও কথা বলেন জিল্লুর রহমান।
তার মতে, চীনের সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে এবং চীনও বিএনপিকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে। কিন্তু এই মুগ্ধতা ভবিষ্যতে দলের কৌশলগত ভুলে পরিণত হতে পারে।
তিনি মনে করেন, বিএনপি এখন চীনের প্রতি অতিমুগ্ধ হয়ে পড়েছে। তারা ক্ষমতায় গেলে চীনের পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র বা চীন নয়, বিএনপির উচিত বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একনায়কতান্ত্রিক আচরণ এবং উন্নয়নের নামে দুর্নীতি বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভেঙে দিয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপি যেভাবে একের পর এক ভুল করছে, তাতে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তারা নেতৃত্বের জায়গা হারাচ্ছে।
তার মতে, প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসের সরকার আসলে নির্বাচন করতে পারবে না। নির্বাচনের তারিখও তারা ঘোষণা করতে পারবে না। কালক্ষেপণ করবে, নানা নাটক করবে। সংস্কারের কিছুই হবে না বিচারও করতে পারবে না। বিপরীতে, বিএনপি নেতারা বড় কথা বললেও কাজের কাজ তারাও কিছু করতে পারবেন না।
জিল্লুর বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন অপরিহার্য। সেই নির্বাচন দ্রুত না হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো আরো বেশি বিপর্যস্ত হবে।
জিল্লুর রহমান মনে করেন, ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে, আগামী কয়েক বছরেও তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দুর্নীতির দায়ে ভারতে ডুবেছে, আর বিএনপি এখন চীনা মুগ্ধতায় ডুবতে বসেছে।
পিএ/এসএন