আজ ২ জুলাই ২০২৫। ঠিক এক বছর আগের এই দিনে ঢাকায় রাজপথে শুরু হয়েছিল শেখ হাসিনার পতনের কাউন্টডাউন। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা শুরু হয়, যা পরে শাহবাগ মোড় অবরোধের মাধ্যমে এক বিশাল গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্দোলনটি প্রথমে “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন” নামে শুরু হয়। সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা পথে নামে। ১ জুলাই রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি। সেখান থেকেই ঘোষিত হয় তিন দিনের আন্দোলনের রূপরেখা।
২ জুলাই দুপুর পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয় গণপদযাত্রা। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এই মিছিল শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ঘন্টাখানেকের জন্য। বিকেল ৫টার দিকে পুলিশের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে দেয়।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়— আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেই এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কীভাবে একত্রিত হল? আন্দোলনকারীদের মতে, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত একটি উদ্যোগ। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হাফসা জানান, “আমরা ঈদের ছুটিতে সারাদেশে কমিউনিকেশন তৈরি করি। একধরনের আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়েছিল আমাদের মধ্যে। সবার একটাই টার্গেট ছিল— এই যৌক্তিক দাবির পেছনে সবাইকে একসাথে নামাতে হবে।”
হাফসা, তানজিনা, তাম্মিসহ অনেক নারী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন। শুরু থেকে তারা সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হাফসা বলেন, “এই আন্দোলনের নেপথ্যে অনেক অপ্রকাশিত ঘটনা আছে। আমরা একসাথে থাকতাম, স্ট্রাটেজি ঠিক করতাম, সবার মধ্যে বোঝাপড়ার একটা শক্তিশালী ভিত্তি ছিল।”
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ওই দিন থেকেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সাত কলেজসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আন্দোলনের অন্যতম কর্মী রিফাত জানান, “এই গণজোয়ার শুধু ৩৬ দিনের ফল ছিল না, বরং এর ভিতর অনেক দিনের ক্ষোভ ও পরিকল্পনা ছিল। আমরা জানতাম, রাজু ভাস্কর্য থেকেই আন্দোলন শুরু করতে হবে। পরে সেটি শাহবাগ, নিউমার্কেটসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ছড়িয়ে দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রলীগের মধ্যেও একটা বিদ্রোহী অংশ আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিল। যারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার ছিল, তারা আর সহ্য করতে পারেনি।”
আন্দোলনের শুরুটা ছিল কেবল কোটা সংস্কার নিয়ে। কিন্তু সরকারের একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্ত, উপেক্ষা এবং দমননীতি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে। ধীরে ধীরে এই ক্ষোভ সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষে পরিণত হয়। শুরু হয় গণআন্দোলন, যার শুরুর দিনটি ছিল ২ জুলাই। এই দিনটি তাই গণআন্দোলনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
আজকের দিনটি সেই সাহসী শিক্ষার্থীদের স্মরণে যারা রাজপথে দাঁড়িয়ে দেশের ভবিষ্যৎ বদলানোর স্বপ্ন দেখেছিল।
এসএন