নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনায় চারটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে এসব মামলার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম।
তিনি বলেন, পৃথক চারটি স্থানে আব্দুস সালাম, সেলিম মন্ডল, মো. সুজন খান ও আলাউদ্দিনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (৭২), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৩), সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানসহ (৬৪) ১৮ জনের নামে ও আরও অজ্ঞাত ৩৮০ জনকে আসামি করে পৃথক ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন একটি ও ৩০ জুন তিনটিসহ মোট চারটি মামলা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা হয়। এতে বাদী হয়েছেন মো. সিরাজুল ইসলাম (৫৮), মুনজিল হোসেন (৫০), মো. আল আমিন (২৩) ও মো. ওয়াজেদ আলী (৪০)।
মো. আল আমিন বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (৭২), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৩), সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান (৬৪), শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান (৩৭), শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান (৪৫) ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল (৪২)। এই মামলায় অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন ৬০-৭০ জন।
মো. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান (৬৪), শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান (৩৭), শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান (৪৫) ও সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল (৪২)। এ মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে ১০০-১৫০ জনকে।
ওয়াজেদ আলীর দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (৭২), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৩), সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান (৬৪), শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান (৩৭), শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান (৪৫) ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল (৪২)। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন ৬০-৭০ জন।
মুনজিল হোসেনের বাদী হওয়া মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ১৯ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন বৃষ্টি হার্ডওয়ার দোকানের সামনে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করাকালীন বাদী মুনজিল হোসেনের ছেলে মো. সুজন খান (২৯) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেদিন এই মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিরা ঘটনাস্থলে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে ভিকটিম সুজন খানের নাভির নিচে ও কোমড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
পরদিন ২০ জুলাই বিকেল ৪টায় বাদী সিরাজুল ইসলামের ছোট ভাই আলাউদ্দিন (৩৬) আন্দোলনরতদের সঙ্গে যোগ দেন। ওইদিন বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাদানী নগর অংশে বিক্ষোভ করলে তাদের দমাতে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। তখন ভিকটিম আলাউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।
আবার ২০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের ডাচ বাংলা ব্যাংক শাখার সামনে বাদী আল আমিনের ছোট ভাই ভিকটিম আব্দুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। এর দুই দিন পর ডাচ বাংলা ভবন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই দিন মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে ডাচ বাংলা ব্যাংক ভবনের সামনে মামলার বাদী ওয়াজেদ আলীর ছোট ভাই ভিকটিম সেলিম মন্ডল গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
আরআর/টিএ