ফজলুর রহমানের বক্তব্যের প্রতিবাদ ছাত্রদল নেত্রীর

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নুসরাত জাহান ফেসবুকে এক বিবৃতি দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

সোমবার (৭ জুলাই) সকালে নুসরাত তার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে "বিবৃতি" আকারে এই প্রতিবাদ জানান।

নুসরাত জাহান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ফজলুর রহমান বলেছেন, “হাসিনা খারাপ,আওয়ামী লীগ খারাপ না।” —এই বক্তব্য একটি ‘ভুল বার্তা' এবং 'আদর্শচ্যুতি'। এই বক্তব্য আমাদের কাছে বিভ্রান্তিকর এবং ইতিহাস ও বাস্তবতার পরিপন্থি মনে হয়েছে, এটার নিন্দা জানাই।

তিনি লেখেন, যে আওয়ামী লীগ ১/১১ থেকে গণতন্ত্র হত্যার সমস্ত অপকর্মের নেতৃত্বে ছিল, যারা শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিঃশেষ করতে চেয়েছে, তাদের দায়ভার কেবল একজনের ঘাড়ে চাপানো রাজনৈতিক অপচেষ্টা।

নুসরাত জাহান আরও লেখেন, ফজলুর রহমানের এই বক্তব্যকে আমি ঘোরতর প্রত্যাখ্যান করছি। বিএনপির লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। আমরা ব্যক্তি নয়, কিন্তু বক্তব্যের অপসংস্কৃতি ও আদর্শচ্যুতি প্রতিরোধে সচেতন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনের ছাত্রশক্তি হিসেবে মাঠে ছিলাম, আছি, থাকব। দলীয় নেতার এমন বক্তব্য নিয়ে ছাত্রদলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এর আগে গত বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টুর শোকসভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। এই দেশে এখন সবাই অনিরাপদ, এই যে মব রাজনীতি চলছে, মব কালচার চলছে। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, যে লোকটার অঙুলি হেলনে এদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সেই লোকটার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়ে দিলেন। সেই বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে বুলডোজার চালিয়ে দিলেন। কেউ প্রতিবাদ করল না, সরকার কিছু করল না, মিলিটারিরা চৌকিদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হইল।

তিনি বলেন, হাসিনা আর বঙ্গবন্ধু এক জিনিস না। হাসিনা খারাপ করছে এর জন্য বঙ্গবন্ধু খারাপ না। এই দেশে বলে আওয়ামী লীগ কী ছিল? ফ্যাসিস্ট। আমিও বললাম ফ্যাসিস্ট। কারণ আমি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অতো কথা বলছি, হ্যাঁ ফ্যাসিস্ট। কিন্তু ফ্যাসিস্টের একটা নেতৃত্ব ছিল। প্রত্যেক জায়গাতে, সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা থানায় ফ্যাসিস্ট হইলেও একজন নেতা ছিল। মানুষ বিপদে পড়লে ওই লোকটার কাছে যাইতে পারত। প্রত্যেক এলাকায় একজন এমপি ছিল। ইলেক্টেড অর নন ইলেক্টেড। সেইখানে গিয়ে মানুষ কথা বলতে পারত। সব জায়গাতে একটা নেতৃত্ব ছিল। সমস্ত জায়গাতে প্রশাসনিক দক্ষতা ছিল। আজকে (৫ আগস্টের পর) এই দেশটা তো কোনো দেশ না ভাই। এ দেশের নেতা কে? ইউনূস সাহেবকে মনে করতাম বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান। ইউনূস সাহেব এখন ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য, ক্ষমতার মসনদে আঁকড়ে থাকার জন্য চক্রান্ত করছেন।

এর আগে গত (১ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার মৃগা বাজারে ঈদ-পরবর্তী এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছিলেন, ১০ দিন আগে আমার ওয়াইফকে রাত ২টার দিকে তারেক রহমান ফোন দিয়েছেন নিজে। উনি কিন্তু ডাইরেক্ট আমাকে ফোন দেন না। ফজলু ভাইয়ের মিজাজটা ঠিক আছে কি না বুইঝা লন আগে। কেন আমি তো বইলা ফেলি, এইডা ঠিক অইতাছে না লিডার। তিনি (তারেক রহমান) বলেছেন, ছয় মাস আগে ফজলু ভাই যে কথাগুলো বলছে এইডা আমার দলকে অনেক বেশি উজ্জীবিত কইরা রাখছে। সেইভ কইরা রাখছে। ফজলু ভাইয়ের একার কথায়ই।

সে সময় এই বক্তব্য দেওয়ার পরপরই কিশোরগঞ্জে তৃনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সে সময় কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিয়ে জনসভায় এমন বক্তব্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। এই বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও প্রত্যাশা করেন।

কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নুসরাত জাহান ফেসবুকে বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। বিএনপি কোটি কোটি মানুষের দল। সেখানে দুইজনের বক্তব্যে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমি এটা প্রত্যাখান করছি।

প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কিশোরগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। জুলাই আগস্টে তার সাহসী নেতৃত্বে কিশোরগঞ্জ শহরে প্রতিদিনই শত শত শিক্ষার্থী রাজপথে ছিলেন। পরে তিনি কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি হন।

নুসরাত জাহানের বাড়ি করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া এলাকায়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন তখন থেকেই নুসরাতের পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
২০ বছরের ছোট অভিনেত্রীর সঙ্গে পর্দায় ফিরছেন রণবীর সিং Jul 08, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি Jul 08, 2025
img
ফ্যাসিস্ট হাসিনার রাষ্ট্রপতি এখনো দায়িত্বে থাকতে পারেন না : নাহিদ Jul 08, 2025
img
অঘোষিত ফাইনাল আজ, শ্রীলঙ্কায় ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ Jul 08, 2025
img
চাঁদাবাজদের জন্য বিএনপিতে মনোনয়নের কোনো দরজা খোলা নেই : ইঞ্জিনিয়ার সেলিম Jul 08, 2025
img
আজও সহনীয় ঢাকার বাতাস Jul 08, 2025
img
সন্দ্বীপে গৃহহীনদের জন্য ৩৪০ ঘর হস্তান্তর করল নৌবাহিনী Jul 08, 2025
img
মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছাড়াতে থানা ঘেরাও Jul 08, 2025
img
পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় এসআই প্রত্যাহার Jul 08, 2025
img
সততা দেখে নেতৃত্ব নির্বাচন করুন: হাসনাত Jul 08, 2025
img
রাজধানীতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে প্রাণ গেল শ্রমিকের Jul 08, 2025
img
ঠাকুরগাঁওয়ে আ.লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রেফতার Jul 08, 2025
img
শুল্ক হ্রাস বা বৃদ্ধি নির্ভর করবে বাংলাদেশের ওপর: ট্রাম্প Jul 08, 2025
img
'অঞ্চলভিত্তিক শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে' Jul 08, 2025
img
সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চলছে ‘ওয়ার ২’ বুকিংয়ের তোড়জোড় Jul 08, 2025
img
অরণ্যের গর্জনে ফিরছে ‘কান্তারা : চ্যাপ্টার ১’ Jul 08, 2025
img
ধানুশের 'স্যার’ সিনেমার সিক্যুয়েল হবে না জানালেন পরিচালক Jul 08, 2025
img
যৌতুকবিরোধী আইনে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা নারীর ন্যায়বিচারে বাঁধা: মহিলা পরিষদ Jul 08, 2025
img
দুপুরের মধ্যে সাত জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়বৃষ্টির শঙ্কা Jul 08, 2025
img
দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসালেন ট্রাম্প Jul 08, 2025