মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাম্রপণ্যের ওপর নতুন করে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, এর আগে তিনি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর একই ধরনের শুল্ক আরোপ করেছিলেন। পাশাপাশি, তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া ওষুধের ওপর শুল্ক আগামী এক বছরের মধ্যে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। তিনি আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আগস্ট ১ তারিখের মধ্যে বহু দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক কার্যকর করার যে সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে, তা আর বাড়ানো হবে না।
ভারতের জন্য এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওষুধ রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার এবং তাম্র ও তাম্রজাত পণ্যের অন্যতম প্রধান ক্রেতা।
ট্রাম্প কী বললেন
“আজ আমরা তাম্র নিয়ে কাজ করছি। আমার মনে হয়, আমরা তাম্রের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবো,” মঙ্গলবার এক মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ কথা বলেন ট্রাম্প। তাঁর এই ঘোষণার ফলে বিশ্বের বাজারে তাম্রের দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করে। এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন খাতভিত্তিক যে শুল্কনীতি নেওয়া হয়েছে, তা আরও বিস্তৃত হলো।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, এই শুল্ক জুলাইয়ের শেষ অথবা আগস্টের শুরুতে কার্যকর হতে পারে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ওষুধ খাতে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তও খুব শিগগির ঘোষণা করা হবে, তবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা সরিয়ে আনতে এক থেকে দেড় বছর সময় দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “আমরা উৎপাদকদের প্রায় এক বছর, এক থেকে দেড় বছর সময় দেবো কারখানা সরাতে। তারপর তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে, আর সেটা হবে অনেক বেশি, প্রায় ২০০ শতাংশ।”
গত কয়েক মাসে ট্রাম্প তাম্র, ওষুধ, কাঠ, সেমিকন্ডাক্টর ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আমদানির ওপর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, যা ভবিষ্যতে আরও শুল্ক আরোপের পথ খুলে দিতে পারে। লুটনিক জানান, ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর খাতের তদন্ত এ মাসের শেষ নাগাদ শেষ হবে এবং তারপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন।
এছাড়া, ট্রাম্প আবারও ব্রিকস দেশগুলোর ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তিনি বলেন, এই জোটকে তিনি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করেন না। তবে স্বীকার করেন, ব্রিকস জোট মার্কিন ডলারের চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, “আপনি চাইলে ডলারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, তবে শুল্ক তো দিতেই হবে। আমি মনে করি, ওরা সেটা চাইবে না।”
ভারতের ওপর এই শুল্কের প্রভাব
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত বিশ্ববাজারে মোট ২ বিলিয়ন ডলারের তাম্র ও তাম্রজাত পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩৬০ মিলিয়ন ডলারের, অর্থাৎ প্রায় ১৭ শতাংশ। সৌদি আরব (২৬ শতাংশ) ও চীন (১৮ শতাংশ)–এর পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম তাম্র বাজার। তবে তাম্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা বিদ্যুৎ, নির্মাণ ও অবকাঠামোসহ নানা খাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা কমলেও, ভারতের অভ্যন্তরীণ শিল্প এ ঘাটতি সামলাতে পারবে বলে ধারণা। সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসতে পারে ওষুধ খাতে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় ওষুধ বাজার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের ওষুধ রপ্তানি ২১ শতাংশ বেড়ে ৯.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ভারতের মোট ওষুধ রপ্তানির ৪০ শতাংশ।
এই খাতে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে ভারতীয় জেনেরিক ওষুধের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভারতের ওষুধ শিল্প দীর্ঘদিন ধরে সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ সরবরাহে প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি ‘মিনি ট্রেড ডিল’ নিয়ে আলোচনা চলছে, যেখানে এই সব খাতের শুল্ক নিয়ে সমঝোতা হতে পারে। যদি এই চুক্তি আগস্ট ১-এর আগে সম্পন্ন হয়, তাহলে ভারতের ওপর এই নতুন শুল্কের প্রভাব পড়বে না।
ইউটি/এসএন