২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাস বলিউডের বড় তারকাদের জন্য ছিল এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার সময়। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া (যেমন ‘ছাভা’, ‘সিতারে জমিন পার’, ‘রেইড ২’) একের পর এক বহু প্রতীক্ষিত, হাই বাজেটের ছবি মুখ থুবড়ে পড়েছে বক্স অফিসে। দর্শকের প্রতিক্রিয়া ও বাণিজ্যিক ফলাফল বলছে, শুধু তারকার নামেই আর ছবি চলে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্যর্থতা বলিউডে একটি বড় মোড়ের সূচনা। 'তারকা মানেই সাফল্য', বহুদিনের এই ধ্যানধারণা এখন ভাঙছে দর্শকদের বাস্তব চাহিদার মুখে।
এই ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছেন অক্ষয় কুমার ও সালমান খানের মতো বড় নাম।
অক্ষয়ের ‘হাউসফুল ৫’, প্রায় ₹২২৫ কোটি বাজেটে নির্মিত হলেও, পুরনো ফর্মুলা ও ক্লান্তিকর কৌতুকে দর্শকের মন জয় করতে পারেনি। ছবিটি "বিলো অ্যাভারেজ" ফলাফল নিয়ে থেমে গেছে। প্রচুর প্রচারণা, ক্যামিও ও ঝাঁ-চকচকে সেট থাকলেও, ‘হাসির সিনেমা’ হিসেবে এটি দর্শকের মুখে হাসি আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
সালমান খানের ‘সিকান্দার’, যেটিকে একটি মাস এনটারটেইনার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটিও ₹২০০ কোটির বাজেট নিয়ে নেমে এসে থেমে গেছে ₹১০০ কোটির কাছাকাছি। ভাইজানের জনপ্রিয়তা থাকলেও, দুর্বল চিত্রনাট্য ও পুরনো গল্প দর্শককে আর ধরে রাখতে পারেনি।
এই তালিকায় রয়েছে আরও বেশ কিছু আলোচিত কিন্তু নিষ্প্রভ ছবি, ‘দেবা’, ‘স্কাই ফোর্স’, ‘গ্রাউন্ড জিরো’, ‘ভুল চুক মাফ’, এবং ‘দ্য ভূতনি’। শাহিদ কাপুর, অক্ষয় কুমার ও রাজকুমার রাওয়ের মতো তারকারা অভিনয়ে থাকলেও, ছবিগুলোর কনটেন্ট ছিল এতটাই দুর্বল যে তা আলোচনাতেই আসেনি।
মাঝামাঝি সফলতা পেয়েছে ‘কেসারি চ্যাপ্টার ২’ ও ‘জাট’। ₹১০০ কোটি পার করলেও, আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে পারেনি। বিশ্লেষকদের মতে, এগুলো ছিল 'মাঝারি মানের জয়', মনে রাখার মতো নয়।
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, দর্শকের মধ্যে এখন 'অডিয়েন্স ক্লান্তি' তৈরি হয়েছে, সেই একই কাহিনি, সেই একই অভিনয় ধরণ, সেই পুরনো গান আর ভিজ্যুয়াল নিয়ে নির্মাতারা বারবার ফিরছেন। ফলাফল: দর্শকের বিরক্তি।
অতিরিক্তভাবে একই তারকাকে একাধিক ছবিতে দেখে দর্শক আর আগ্রহী থাকছে না। নতুন গান কিংবা ভিজ্যুয়ালও আর সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন তুলতে পারছে না।
আসলে, নির্মাতারা এখনো বুঝতে পারছেন না, বর্তমান দর্শক বাস্তবতাভিত্তিক গল্প, আবেগঘন সংযোগ এবং নতুনত্ব খোঁজে। শুধু প্যাকেজিং আর পোস্টারে মোটা অক্ষরে নাম লেখালে আর চলে না।
তবে, কিছু সিনেমা এই পরিবর্তনশীল দর্শকের চাহিদা বুঝে সাফল্য পেয়েছে। আমির খানের ‘সিতারে জমিন পার’ তার হৃদয়ছোঁয়া গল্প দিয়ে প্রমাণ করেছে, আবেগ ও মানবিকতার গল্প এখনো মানুষকে টানে। আবার ‘রেইড ২’-এর মতো বাস্তবভিত্তিক ও থ্রিলারধর্মী গল্পও জনপ্রিয় হয়েছে কারণ তা বাস্তবতাকে ছুঁয়েছে।
এই অবস্থায় স্পষ্ট এক বার্তা দিচ্ছে বলিউডের ব্যর্থতা, শুধু তারকার মুখ নয়, ভালো গল্পই এখন মূল হিরো।
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বলিউড এখনই নিজেদের নির্মাণের ধরনে পরিবর্তন না আনে, দর্শকের পছন্দ-অপছন্দকে বুঝে না চলে, তবে বড় বাজেট, তারকার নাম অথবা ধামাকা প্রচারণা, কিছুই আর সিনেমা বাঁচাতে পারবে না।
এমআর/এসএন