মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ব্রাজিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানো হতে পারে। পাশাপাশি তিনি সাবেক ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে চলমান বিচার বন্ধের দাবিও করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ট্রাম্পের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর ব্রাজিল “আক্রমণ” চালাচ্ছে এবং বলসোনারোর বিরুদ্ধে “ডাইনি শিকারের” মতো করে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মূলত বলসোনারো ২০২২ সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দিতে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে বিচারের মুখে রয়েছেন।
ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ট্রাম্পের এই ঘোষণার জবাবে বলেন, ব্রাজিলের ওপর যদি শুল্ক বাড়ায়, তাহলে তার দেশও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। তিনি ট্রাম্পের বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, “আমরা কারও হস্তক্ষেপ বরদাশত করব না। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।”
এর আগে গত সপ্তাহেও বলসোনারোর বিচার নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। ট্রাম্প বলেছিলেন, বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলা একটি “আন্তর্জাতিক লজ্জা”। এর জবাবে বলসোনারো তাকে ধন্যবাদ জানান।
বিবিসি বলছে, ব্রাজিল ছাড়াও এই সপ্তাহে ট্রাম্প ২২টি দেশের বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যার মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারও রয়েছে। তবে ব্রাজিলের ক্ষেত্রে ঘোষিত ৫০ শতাংশ শুল্ক অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি এবং তা পূর্বঘোষিত ১০ শতাংশ হারের চেয়ে অনেক বড় বৃদ্ধি।
ট্রাম্প বলেন, এই শুল্ক “বর্তমান সরকারের গুরুতর অন্যায় সংশোধনে প্রয়োজনীয়”। তিনি ব্রাজিলের ডিজিটাল বাণিজ্য নীতির ওপর তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেবেন বলেও জানিয়েছেন, যা মার্কিন আইনের ৩০১ ধারা অনুযায়ী শুল্ক আরোপের আইনি প্রক্রিয়ার অংশ।
এর আগে ২০১৯ সালে ট্রাম্প বলসোনারোর সরকারের একটি প্রযুক্তি-সংক্রান্ত কর আরোপের উদ্যোগের বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
ট্রাম্প তার বিবৃতিতে বলেন, ব্রাজিল “মার্কিন নির্বাচনের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার হুমকির মুখে ফেলেছে”, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সেন্সর করার অভিযোগও। ট্রাম্পের নিজস্ব কোম্পানি ‘ট্রাম্প মিডিয়া’ বর্তমানে ব্রাজিলের আদালতের একাধিক আদেশের বিরুদ্ধে লড়ছে, যেগুলোর ফলে কিছু সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে।
ব্রাজিল ইতোপূর্বে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল, কারণ প্রতিষ্ঠানটি এমন কিছু অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, যেগুলো ব্রাজিলের নির্বাচনের বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছিল বলে মনে করা হচ্ছিল।
গত মাসে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ আদালত এক রায়ে বলেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত কনটেন্টের জন্য দায়ী থাকবে।
ট্রাম্প ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন নিয়েও সমালোচনা করেন। তিনি এই জোটকে “অ্যান্টি-আমেরিকান” বা মার্কিনবিরোধী বলে অভিহিত করেন এবং জানান, এই জোটের দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট লুলা পাল্টা মন্তব্যে বলেন, “ট্রাম্পকে বুঝতে হবে, পৃথিবী এখন পাল্টে গেছে। আমরা আর কোনো সম্রাট চাই না।”
পিএ/এসএন