ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় দেশের নাগরিকদের জন্য ই-পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া এখন আরও সুবিন্যস্ত ও সহজ করা হয়েছে। অনলাইন আবেদন থেকে শুরু করে হাতে পাসপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই আনা হয়েছে স্বচ্ছতা ও গতি। আবেদনকারীদের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, অনলাইন প্রক্রিয়া এবং পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
ই-পাসপোর্ট আবেদনের অন্যতম সুবিধা হলো, কোনো কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন নেই। এমনকি আবেদন ফরমেও ছবি সংযোজন বা সত্যায়ন করতে হয় না। ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) এবং পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আবশ্যক। ১৮-২০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এনআইডি অথবা জন্মনিবন্ধন এবং ২০ বছরের ঊর্ধ্বে কেবল এনআইডি কার্ড থাকলেই চলবে। পুরোনো পাসপোর্ট থাকলে তার মূল কপি ও ফটোকপি, ফি জমা দেওয়ার রশিদ এবং পেশা বা ঠিকানা প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। সরকারি কর্মকর্তা হলে GO/NOC বা প্রত্যয়নপত্র আবশ্যিক। বিবাহিতদের জন্য বিবাহ সনদ বা নিকাহনামা এবং তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত সনদের মতো প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
ই-পাসপোর্ট আবেদনের প্রথম ধাপ হলো অনলাইনে আবেদন করা। www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আবেদন শুরু করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন- নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, এনআইডি/জন্মনিবন্ধন নম্বর ইত্যাদি সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ই-পাসপোর্টে নাম, জন্মতারিখ, জন্মস্থান এবং এনআইডি/জন্মসনদ নম্বর পরিবর্তনযোগ্য নয়। আবেদনকারীরা ৪৮ বা ৬৪ পৃষ্ঠার এবং ৫ বা ১০ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট বেছে নিতে পারবেন। ১৮ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের উপরের আবেদনকারীরা কেবল ৫ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট পাবেন।
ফি পরিশোধ ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট : ব্যাংক অথবা অনলাইন
আবেদনের পরের ধাপ হলো পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা। এটি অনলাইনে বা ব্যাংকে এ-চালানের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে। ফি’র সাথে ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য। সাধারণ ডেলিভারি (২১ কর্মদিবস), জরুরি ডেলিভারি (১০ কর্মদিবস) এবং অতি জরুরি ডেলিভারি (২ কর্মদিবস) এই তিন ধরনের সেবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ফি নির্ধারিত আছে। উদাহরণস্বরূপ, ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদের সাধারণ ডেলিভারির জন্য ৪ হাজার ২৫ টাকা এবং অতি জরুরি ডেলিভারির জন্য ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে। ফি পরিশোধের পর আবেদনপত্র প্রিন্ট করে বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করতে হবে।
পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিক ও ছবি : এখন আর বাইরে যাওয়ার দরকার নেই-
নির্ধারিত তারিখে আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় সব মূল কাগজপত্র এবং তাদের ফটোকপি, অনলাইন আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি ও ফি জমা দেওয়ার রশিদ নিয়ে নিজ নিজ বিভাগীয়/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হতে হবে। ই-পাসপোর্টের জন্য আলাদা করে ছবি তোলার প্রয়োজন নেই। কারণ পাসপোর্ট অফিসেই ডিজিটাল ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং আইরিশ স্ক্যান করা হয়। এরপর আপনার দেওয়া সব তথ্য যাচাই করা হবে এবং একটি ডিজিটাল স্বাক্ষর দিতে হবে।
সতর্কতা : কোনো ধরনের দালাল বা মধ্যস্থতাকারীর সাহায্য না নিয়ে সরাসরি পাসপোর্ট অধিদপ্তর বা ওয়েবসাইটের নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ জন ১৬৪৪৫ নম্বরে ফোন দিয়ে পাসপোর্ট কল সেন্টারের সেবা নিচ্ছে।
এসএন