বিদেশি বিনিয়োগ কমছে চার কারণে

দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি এবং উচ্চ সুদ ও করহারের কারণে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ক্রমেই কমছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বাংলাদেশে এসেছে মাত্র ৯১ কোটি ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ কোটি ডলার কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) যেখানে এফডিআই এসেছিল ৩৩ কোটি ডলার, সেখানে এবার তা নেমে এসেছে ২১ কোটি ডলারে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মতে বিনিয়োগের এ ধারা অব্যাহত থাকলে শিল্পোৎপাদন, কর্মসংস্থান ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কেউ বলতে পারবেন গত আট মাসে কোনো চীনা গার্মেন্টস বাংলাদেশে এসেছে? স্পিনিং মিল করেছে? আমাদের সঙ্গে পার্টনার হয়েছে? কেউ এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করতে চায় না, যেখানে গ্যাস নাই, বিদ্যুৎ নাই আর ব্যবসা করার খরচ দিনদিন বাড়ছে।’ এ বাস্তবতার সঙ্গে একমত অর্থনীতিবিদরাও। তাঁদের মতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের ঘাটতি, অর্থনীতির নীতিগত অস্থিরতা-সব মিলিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন।

জানতে চাইলে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ঘাটতিসহ নানান কারণে ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তায় ছিলেন।

এর ফলে ব্যবসার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়েছে। যদিও পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও নতুন বিনিয়োগে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি, দেশি বা বিদেশি দুই ক্ষেত্রেই।’
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ মনে করেন, পলিটিক্যাল আনসার্টেইনটি ফেব্রুয়ারি থেকেই বাড়ছে। এর প্রভাব সরাসরি বিনিয়োগের ওপর পড়েছে।

এক্সচেঞ্জ রেটে স্থিতিশীলতা কিছুটা ফিরে এলেও মূল্যস্ফীতির দিক দিয়ে এখনো ইতিবাচক অগ্রগতি নেই। বিদেশি বিনিয়োগ না আসার ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন কমেছে এবং বাড়ছে বেকারত্ব, যা দেশের যুবসমাজ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি তৈরি করছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়বে না, কর্মসংস্থানও বাড়বে না এটাই বাস্তবতা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা, করহার ও সুদহার যৌক্তিক মাত্রায় আনা, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করে শিল্পোৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো, অবকাঠামো ও নীতিসহায়ক ব্যবস্থার সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।

কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি আস্থার সংকটে ভুগছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরপেক্ষ অর্থনৈতিক নীতি ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ছাড়া এ সংকট কাটানো সম্ভব নয়। এখনই সময় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের। অন্যথায় শিল্প ও শ্রম উভয় খাতেই দীর্ঘমেয়াদি ধস অনিবার্য।


পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ Aug 13, 2025
img
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন দুদকের তিন কর্মকর্তা Aug 13, 2025
img
'দেখতে পুরুষের মতো' ম্রুণালের কটাক্ষের ইঙ্গিতপূর্ণ জবাব দিলেন বিপাশা Aug 13, 2025
img
নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে, এনসিপি’র হয়ে করবো কি-না সিদ্ধান্ত নেইনি: আসিফ মাহমুদ Aug 13, 2025
img
১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১০৫ কোটি ডলার Aug 13, 2025
img
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ৩ গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব Aug 13, 2025
img
নিজের জীবন নিয়ে আশঙ্কার অভিযোগ রাহুল গান্ধীর Aug 13, 2025
img
দূষণ রোধে প্রথমবারের মতো যাত্রীদের বিনা মূল্যে গণপরিবহনসেবা দেবে সুইজারল্যান্ড Aug 13, 2025
img
জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতিতে গড়িমসি বরদাস্ত হবে না: বুলবুল Aug 13, 2025
img
যত দিন যাচ্ছে গানের প্রতি আমার অ্যাটাচমেন্ট কমছে : অনুপম Aug 13, 2025
img
জুলাই বিপ্লব কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অবারিত সুযোগ এনে দিয়েছে: ধর্ম উপদেষ্টা Aug 13, 2025
img
মাদারীপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোকন গ্রেপ্তার Aug 13, 2025
img
বাংলা ছবির মর্যাদা ফেরাতে মমতা সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত Aug 13, 2025
সৎ মায়ের বার্তা পেলেন সারা, জন্মদিন হয়ে উঠল বিশেষ! Aug 13, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত নয় : রিজভী Aug 13, 2025
ইসরায়েলের চার শহরে ড্রোন হামলার দাবি হুতিদের, প্রতিক্রিয়া নেই নেতানিয়াহুর Aug 13, 2025
img
৪০ পেরিয়ে আজও যেন 'অষ্টাদশী' পূজা বাত্রা Aug 13, 2025
ভারতকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার হুমকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর Aug 13, 2025
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার জয়ের দাবি হাঙ্গেরির Aug 13, 2025
এই ফেতনার যুগে আপনি যেভাবে ভালো থাকবেন Aug 13, 2025