চাতক পাখির মতো জাতি জামায়াতে ইসলামীর দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোলন পথ হচ্ছে সৎ, যোগ্য, দক্ষ, আদর্শ, নৈতিক ও মানবিক নেতৃত্ব। যারা চাঁদাবাজি করে, সন্ত্রাসী, দুর্নীতি, খুন, লুটপাট করে তাদের ওপর জাতি আস্থা রাখতে পারে না। জামায়াতে ইসলামীতে রয়েছে সৎ, যোগ্য, দক্ষ, আদর্শ, নৈতিক ও মানবিক নেতৃত্ব।
তিনি বলেন, জাতি জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আস্থা রাখতে চায়। কিন্তু এটা কেউ কেউ বুঝতে পেরে নতুন করে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে। যত ষড়যন্ত্র আর অপপ্রচারই চালানো হক, জনগণ সকল অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র রুখে দিবে।
শনিবার (১২ জুলাই) রাতে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের পেশাজীবী প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পাথর দিয়ে মানুষ হত্যা করে পুরো জাতিকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। সারাদেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এতে কারো কারো গায়ে লাগে! কিন্তু তারা যদি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, ধর্ষকের পক্ষের না হয় তাহলে তাদের গায়ে কেন লাগে?
তিনি বলেন, তাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে উচিত ছিল জামায়াতে ইসলামীকে অনুসরণ করে তারাও সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, ধর্ষকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। প্রশাসনকে সহযোগিতা করা। উল্টো দেখা গেছে পুলিশ অপরাধীদের আটক করে আনলে একটি দলের নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করে, থানা ভাঙচুর করে, পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে অপরাধীদের থানা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, ধর্ষকদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া পরিহার করে দেশ গড়তে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে তিনি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যারা বলে নির্বাচন দিলেই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে তাদের বক্তব্যে প্রমাণ হয়, তারা সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করেই যেনতেন একটি নির্বাচনের জন্য নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে! তারা নিজেদেরকে বড় দল দাবি করে। কিন্তু তারা জানে না ৩৫ শতাংশ তরুণ ভোটাররা কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, খুনি, ধর্ষকের দলকে ভোট দিবে না।
তিনি বলেন, যেনতেন একটি নির্বাচন করে আগামীতে কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আগামী নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র পাহারা দিবে এদেশের তরুণ প্রজন্ম। তারা তাদের ভোটের হিস্যা বুঝে নিবে। তাই কোন সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজ দিয়ে জবরদখলের স্বপ্ন পরিহার করে গণতান্ত্রিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতার রাজনীতি করতে তিনি সকল দলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনা চাঁদা নয়, ব্যবসায়িক বিরোধে সংগঠিত বলে ডিএমপি কমিশনার চরম মিথ্যাচার করেছে জাতির সঙ্গে। অথচ হত্যার শিকার সোহাগের পরিবার পরিষ্কার বলেছে, সোহাগের কাছে মাসে ২ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করেছে চাঁদাবাজরা। কিন্তু সোহাগ সেই চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাকে পৈশাচিক কায়দায় পাথর দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
কোন দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়ে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নয়তো জনগণ রাস্তায় নামলে কে কত বড় দল, কে কত বড় ক্ষমতাধর সেই অস্তিত্বও থাকবে না। তিনি উপস্থিত পেশাজীবী প্রতিনিধিদের ১৯ জুলাইয়ে জাতীয় সমাবেশ দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল-আমিন, ঢাকা বারের সাবেক সহ-সভাপতি, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি মো. আব্দুস সালাম প্রমুখ। এছাড়াও সম্মেলনে মহানগরীর নেতৃবৃন্দসহ পেশাজীবী বিভাগের দায়িত্বশীল নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যেই অমানবিক পরিস্থিতি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোলনের জন্যই আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী একটি মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেখানে প্রতিটি নাগরিক স্বাধীন ও নিরাপদে বসবাস করার নিশ্চয়তা পাবে। জামায়াতে ইসলামী শুধু মুখে বলে না, বাস্তবেও করে দেখায়।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ ৩টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে প্রমাণ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে কোন দুর্নীতি নাই, চাঁদাবাজি নাই, সন্ত্রাসী নাই, দখলদারিত্ব কিংবা টেন্ডারবাজি নাই। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে রাষ্ট্র গড়ার জন্য মানুষ গড়তে হবে। সেজন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির প্রশিক্ষিত মানুষ গড়েছে। এজন্যই জামায়াতে ইসলামী দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারে, জামায়াতে ইসলামীতে রয়েছে সৎ, যোগ্য, দক্ষ, আদর্শিক ও নৈতিক মানবিক নেতৃত্ব।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী কেন সমাবেশের ডাক দিয়েছে? কারণ, গণমানুষের ৭ দফা দাবি আদায়ের জন্য জামায়াতে ইসলামী জনগণকে সঙ্গে নিয়েই দাবি আদায় করা যৌক্তিক এবং গণতান্ত্রিক ধারা বলে মনে করে। বিগত ১৭ বছরের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিরকরণের এই ৭ দফা দাবি আদায় হলেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
এসময় তিনি উপস্থিত পেশাজীবী প্রতিনিধিদের ৭ দফা দাবি আদায়ে আগামী ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশে জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে যোগদানের আহ্বান জানান।
এসএন