বিচারিক আদালতে তারেক-জুবাইদার বিচার নিরপেক্ষ হয়নি: হাইকোর্ট

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতের বিচারে নানান অসঙ্গতি উঠে এসেছে। যেখানে দ্রুত গতিতে সাক্ষ্য নেওয়া ও রায় ঘোষণা করা, জুবাইদা রহমানকে নোটিশ ইস্যু না করা এবং অভিযোগ গঠনে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট।

হাই কোর্টের মতে, বিচারিক আদালতে দুই মাস চার দিনে ৪২ সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া এবং সাক্ষ্য শেষে আট দিনের মধ্যে রায় দেওয়ার এমন দ্রুত গতি ও সমাপ্তি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস তৈরি করে যে, বিচার নিরপেক্ষভাবে হয়নি। গত ২৮ মে এই রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি মো.খসরুজ্জামানের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ।

সোমবার ওই রায়ের ৫২ পৃষ্ঠার অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। রায়ে ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আর এই রায়ের সুবাদে তারেক রহমান দুই ধারায় মোট নয় বছর সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন।

রায়ে হাই কোর্ট বলেন, নথি থেকে জানা যায় যে, ৪২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য দুই মাস চার দিনের মধ্যে রেকর্ড করা হয়েছিল এবং সাক্ষ্য নেওয়ার আট দিন পর অবিলম্বে রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এত দ্রুত গতিতে বিচারের অগ্রগতি ও সমাপ্তি ব্যাপক বিশ্বাস তৈরি করে যে, এটি নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি।

দুদক আইনে ২৬ (১) ধারা অনুসারে নোটিশ দেওয়ার বিধান সম্পর্কে হাই কোর্ট বলেন, নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। যেহেতু কোনও নোটিশ দেওয়া হয়নি তাই তাকে (জুবাইদা রহমানকে) দোষী সাব্যস্তকরণ এবং সাজা আইন অনুসারে টেকে না এবং এটা বাতিল যোগ্য। এছাড়া আপিলকারীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল তা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ ছিল। ফৌজদারি কার্যবিধির ২২১ ধারার বিধানগুলো পালন করা হয়নি। অতএব, এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত ও সাজা বহাল রাখা যায় না।

আপিল না করেও তারেক রহমানের খালাস পাওয়ার বিষয়ে রায়ে বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশর উচ্চ আদালতের নজির অনুসারে যেহেতু মামলায় নানা ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে, সেহেতু পুরো রায়টি বাতিলযোগ্য। তাই এক্ষেত্রে তারেক রহমানও খালাসের সুবিধা পেয়েছেন।

আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। আপিলের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এস এম শাহজাহান, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী কায়সার কামাল ও জাকির হোসেন ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল করিম।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমাদের দেওয়া যুক্তি আইনগতভাবে যে সঠিক ছিল সেটা হাই কোর্ট বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রমাণিত হলো। আমরা বলেছি তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছিল। জাস্টিস হারিড জাস্টিস বারিড। দ্রুত শুধু সাক্ষ্য নেওয়াই নয়, এখানে মোমবাতি জালিয়েও সাজা দেওয়ার জন্য দ্রুত বিচার কাজ চালিয়েছিল বিচারিক আদালত। গত ২৬ মে শুনানি শেষে আপিলের রায় দিতে ২৮ মে দিন ধার্য করেছিলেন উচ্চ আদালত। তার আগে গত ১৪ মে ডা. জুবাইদা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিলেন হাই কোর্ট। একইসঙ্গে জরিমানা স্থগিত করে ওইদিন আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে জামিন দেওয়া হয়। গত ১৩ মে আপিল দায়েরে ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনা করেন হাই কোর্ট। বিলম্ব মার্জনার পর ডা. জুবাইদা রহমান সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলার বিচার শেষে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমানকে দুই ধারায় মোট নয় বছর এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছর এবং ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। জুবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ডা. জুবাইদা রহমান। ১৭ বছর পর চলতি বছরের ৬ মে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আইভীর মুক্তিতে বাধা, নতুন মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট আদেশ Nov 10, 2025
img
দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেও সুপারস্টার শব্দটি শুনতে পাইনি : শাকিল খান Nov 10, 2025
img
যত ক্ষমতাধরই হোক উড়ে এসে জুড়ে বসা কাউকে মানবো না: অসীম Nov 10, 2025
img
আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার : মোস্তফা ফিরোজ Nov 10, 2025
img
নিজের মানসিক যন্ত্রণার কথা শেয়ার করলেন রিয়া চক্রবর্তী Nov 10, 2025
img
আমি নাম জানি না, কিন্তু চাঁদাবাজি হচ্ছে: নৌ উপদেষ্টা Nov 10, 2025
img
২১ নভেম্বর থেকে শুরু মাধ্যমিক ভর্তি আবেদন, ১৪ ডিসেম্বর লটারি ড্র Nov 10, 2025
img
আওয়ামী লীগ রাজপথে নামলেই তাদের ধোলাই করা হবে : রাশেদ খাঁন Nov 10, 2025
img
দায়িত্ব পালনের সময় মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করলো ডিএমপি Nov 10, 2025
img
সিন্ডিকেট ছেড়ে দেওয়ার জন্য আফসোস করি: তিশা Nov 10, 2025
বর্তমান যুগে বিয়ে না করার কারণ কি? | ইসলামিক প্রশ্নোত্তর Nov 10, 2025
img
ক্ষমতার লোভে বিএনপি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিক্রি করেনি: ইশরাক হোসেন Nov 10, 2025
শুরুতে প্রত্যাহার শেষমেশ বরখাস্ত গাজীপুরে পুলিশ কমিশনার Nov 10, 2025
শেরপুরে কৃষি কর্মকর্তার উপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লায় মানববন্ধন Nov 10, 2025
ধানের শীষে ভোট চাওয়ায় ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা জামায়াত নেতার! Nov 10, 2025
img
শুভমিতার কন্ঠে জীবনানন্দ দাশের কবিতা Nov 10, 2025
img
ডিএমপির নতুন নির্দেশনা, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা Nov 10, 2025
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনার মধ্যেই ভেনেজুয়েলার রুশ ক্ষেপনাস্ত্র Nov 10, 2025
img
গোপনে ক্যাম্প ন্যুতে ফিরলেন মেসি, চমকে উঠলো বার্সা সমর্থকরা Nov 10, 2025
১৩ নভেম্বর ঘিরে অস্থিরতা! জবাবে যা বললেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা Nov 10, 2025