বদলের হাওয়ায় যেন কেঁপে উঠছে অতীতের গর্ব। বাংলাদেশে চলছে এক অদ্ভুত পরিবর্তনের ধারা, যেখানে ঐতিহ্য নয়, প্রাধান্য পাচ্ছে আধুনিকতার নামে নির্মম মুছে ফেলা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ধূলিস্যাৎ হওয়ার পথে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ময়মনসিংহের বাড়ি—যা শুধুই একটি বাড়ি নয়, ভারতরত্ন সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটে, বাঙালির গর্ব, ইতিহাসের সাক্ষ্যবাহক।
ঘটনাটি সামনে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে দুই বাংলায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে একাংশ এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেউ বলছেন, এটা শুধু একটা বাড়ি ভাঙা নয়—এটা হলো এক রকম বার্তা, যেখানে ইতিহাসকে নিঃশেষ করে ফেলার ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে।
এই ঘটনায় এবার সরব হয়েছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ রুপালি গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতীয় সিরিয়ালপ্রেমীদের কাছে যিনি 'অনুপমা' নামেই বেশি পরিচিত। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, “অত্যন্ত জঘন্য এবং ক্ষমার অযোগ্য কাজ। ইউনুস সরকারের তথাকথিত নৈতিক নেতৃত্বে বাংলাদেশে ভেঙে ফেলা হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটে। এটা শুধু ভাঙা নয়, এটা শিল্প, সংস্কৃতি আর বাঙালি গর্বকে মুছে ফেলার চেষ্টা।”
রুপালি আরও যোগ করেন, “ওরা ঐতিহ্যকে ভয় পায়। ওরা সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক নয়, বরং হিংসাকে মহিমান্বিত করে। এই কাজের মধ্য দিয়েই ওদের আসল রূপ উন্মোচিত হল।”
বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি ১৯৮৯ সাল থেকে বাড়িটি ব্যবহার করে আসছিল। তবে ২০০৭ সালের পর এটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এখন সেটি ভেঙে বহুতল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সামনের অংশের বেশিরভাগ ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হস্তক্ষেপে আপাতত ভাঙার কাজ বন্ধ রয়েছে, কিন্তু বাঁচবে কি এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি—সে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ, সুচিত্রা সেনের পাবনার বাড়ির পর এবার সত্যজিৎ রায়ের ভিটে ভাঙার প্রক্রিয়া যেন ইঙ্গিত দিচ্ছে একটি বৃহত্তর ঐতিহ্যবিরোধী প্রবণতার, যা উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে গোটা উপমহাদেশের শিল্পসংবেদনশীল মানুষদের মাঝে।
এসএন