রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারানো উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আবেগে ভেঙে পড়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। গেল জুনে রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক জোটের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে পিয়ংইয়ং-এর এক থিয়েটারে কফিনে মোড়ানো সেনাদের মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
থিয়েটারে প্রদর্শিত সেই ছবিতে দেখা যায়, কিম জং উনের চোখে অশ্রু, চারপাশে আবহ তৈরি হয়েছে এক শোকাবহ পরিবেশ। উপস্থিত দর্শকরাও ছবিটি দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দৃশ্য রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া বন্ধুত্বের এক নতুন ও দৃঢ় অধ্যায়ের সূচক।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, চীন বা ইরানের চেয়েও বর্তমানে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই ইস্যুতে রুশ বিশ্লেষক ওলেখ ইগনাতফ আল জাজিরাকে বলেন, “উত্তর কোরিয়া এখন রাশিয়ার জন্য ইরান বা চীনের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।”
সম্প্রতি রাশিয়াকে গোলাবারুদ এবং ভারী অস্ত্র সরবরাহ করেছে উত্তর কোরিয়া। ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, কিম জং উনের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ং খুব শিগগিরই যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরীয় সৈন্যের সংখ্যা তিন গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। প্রায় ৩০০ অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এর আগে কুরস্কে প্রায় ১৫,০০০ সৈন্য যুদ্ধ করেছে।
রুশ ও পশ্চিমা গণমাধ্যমের হিসেব অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে উত্তর কোরীয় অতিরিক্ত সেনা রাশিয়ার জন্য একপ্রকার ‘আশীর্বাদ’ বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
তারা আরও বলছেন, উত্তর কোরীয় সৈন্যরা রাশিয়ার কাছ থেকে আধুনিক যুদ্ধকৌশল শিখছে এবং এর বিনিময়ে পিয়ংইয়ং পাচ্ছে তেল, গম এবং সামরিক প্রযুক্তি তৈরির সম্ভাবনা।
সামরিক সহযোগিতার বাইরেও রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্কও সম্প্রসারিত হয়েছে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী রেললাইনে চালু হয়েছে পূর্ণবাহী ট্রেন। রাশিয়া থেকে যাচ্ছে কয়লা, সার, লোহা; বিপরীতে উত্তর কোরিয়া থেকে আসছে সামুদ্রিক খাবার ও দুর্লভ খনিজ পদার্থ। চলছে বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পও।
উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এক সময় রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় অংশ নিয়েছিল এবং পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরোধিতা করেছিল। তবে ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করে। কিম জং উন মস্কো সফরে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বিদেশি হুমকির বিরুদ্ধে একে অপরকে সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
এরপর থেকেই উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়ায় পাঠানো শুরু হয়, যা এখন বিশ্বের রাজনীতিতে নতুনভাবে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।
এফপি/টিএ