ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার চলমান টেস্ট সিরিজে একের পর এক বল পরিবর্তনের ঘটনায় মাঠের খেলা যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি প্রশ্ন উঠেছে বলের গুণগত মান নিয়েও। সমস্যার উৎস খুঁজতে এবার তদন্তে নামছে ব্রিটিশ ক্রিকেট বলস লিমিটেড, যারা ঐতিহ্যবাহী ডিউক বল তৈরি করে থাকে।
প্রথম তিনটি টেস্টে ধারাবাহিকভাবে বলের আকার বিকৃতি এবং দ্রুত নরম হয়ে যাওয়ার অভিযোগে বহুবার বল পরিবর্তন করা হয়েছে। এমনকি লর্ডসে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে পাঁচবার বল বদলাতে হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের সকালে মাত্র ১০.২ ওভারের মাথায়ও বল পাল্টাতে বাধ্য হন আম্পায়াররা।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ ক্রিকেট বলস লিমিটেডের মালিক দিলীপ জাজোদিয়া বিবিসি স্পোর্টকে বলেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব ব্যবহৃত বল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করব। কাঁচামাল থেকে শুরু করে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে। যদি কোথাও ঘাটতি ধরা পড়ে, তাহলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে।’
ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট বল যেন একজন নিখুঁত উইকেটকিপারের মতো যার উপস্থিতি বোঝাই যায় না। কিন্তু এখন প্রতিটি ইনিংসে বল বদলাতে হচ্ছে। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। পাঁচ বছর ধরে একই সমস্যা চলছে, ডিউক বল প্রস্তুতকারকদের এটি অবশ্যই সমাধান করতে হবে।’
ডিউক বলের নির্মাণ পদ্ধতি এখনও ঐতিহ্যবাহী কর্ক, সুতার মোড়ানো গাঁথুনি, চামড়ার আবরণ এবং হাতে সেলাই করা সিম। মূল উপাদান হলো চামড়া, যা সাধারণত গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি হয়। জাজোদিয়া মনে করেন, করোনাকালের অভিঘাত, ট্যানারির অভাব, চামড়ার গুণগত পরিবর্তন ও কেমিক্যাল স্বল্পতার কারণে গঠনগত দুর্বলতা তৈরি হতে পারে।
তার ভাষায়, ‘চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই হয়তো চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন কিংবা প্রয়াত হয়েছেন। কেউ কেউ ব্যবসাও গুটিয়ে ফেলেছেন। এখন হাতে গোনা এক-দু’টি ট্যানারি বলের জন্য চামড়া সরবরাহ করছে। বিকল্পও খুব সীমিত।’
তিনি আরও বলেন, আধুনিক ক্রিকেটে বড় ব্যাট, শক্ত উইকেট এবং বাড়তি মারমুখী মনোভাব বলের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে।
একটি প্রস্তাব এসেছে ৮০ ওভারের বদলে ৬৫ ওভার পর নতুন বল নেওয়ার। যদিও জাজোদিয়া এটিকে খুব একটা জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত মনে করছেন না। তার মতে, ‘তিনটি টেস্টই ছিল দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ। তাই হুট করে কোনো বড় পরিবর্তনের দরকার নেই। সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ই আমাদের করণীয়।’
ইসিবি অবশ্য চুক্তিগতভাবে ডিউক বল ব্যবহারে বাধ্য নয়। প্রতি বছর নতুন করে তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়। বিকল্প হিসেবে গুন অ্যান্ড মুর নামক প্রতিষ্ঠান হ্যান্ড-স্টিচড বল সরবরাহ করছে কাউন্টি দ্বিতীয় একাদশে। এমনকি গত দুই মৌসুম ধরে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে কুকাবুরা বল পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে সফট পিচে এটি কার্যকর না হওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এর উপযোগিতা নিয়ে।
জাজোদিয়ার শেষ কথা, ‘আমি নিজ হাতে প্রতিটি ম্যাচের বল বাছাই করি। নতুন বল দেখতে সত্যিই শিল্পকর্মের মতো। কিন্তু আপনি আগেভাগে কখনও জানতে পারবেন না মাঠে কী ঘটবে। তাই প্রতিটি ধাপে যত্নবান হওয়াই একমাত্র উপায়।’
এমকে/টিকে