বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রতিবার আন্দোলনে মানুষ প্রাণ দেয়, সুযোগ তৈরি হয় কিন্তু দায়িত্বহীনতার কারণে সেই সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়, এটা আর হওয়া চলবে না। আমরা যদি এবারও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই সুযোগ হারাই, তাহলে বাংলাদেশ বহু বছর পিছিয়ে যাবে।
শনিবার (১৯ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জোটবদ্ধ হয়েছিলাম দায়িত্ববোধ থেকে, সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য। এই সংগ্রামে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, গুম হয়েছেন ১৭০০-এর বেশি মানুষ, হাজার হাজার নিহত হয়েছেন, এমনকি ২ হাজারের বেশি শিশু-কিশোরকেও হত্যা করা হয়েছে। এই ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে এক ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এখন একটা সুযোগ এসেছে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই সুযোগটাও আবার বিপন্ন হতে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জনগণের মুক্তি ও অগ্রযাত্রায় বিশ্বাস করে না, তারা আবার সংঘবদ্ধ হচ্ছে। হত্যা, গুম, সবকিছুই বেড়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের মতো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক কর্মীদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দয়া করে কালবিলম্ব করবেন না। এই সংকটের সমাধান তিনটি বিষয়ের মধ্যে নিহিত– সংস্কার, সনদ ও নির্বাচন। দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা দিন, যাতে সবাই একমত হয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট) নেতৃত্ব নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রাজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তি। আমরা আশা করি, তার নেতৃত্বে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। গণতন্ত্রের পথে যেতে হলে আলোচনা, সহনশীলতা আর গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতেই যেতে হবে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি। কোনো ষড়যন্ত্র কিংবা দমনপীড়ন আমাদের থামাতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমরা আবার জনগণের কাছে ফিরে যাব। ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলব। ১৯৭১-এ যেভাবে মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছিল, এবার তেমনি করে জনগণ গণতন্ত্র চাইছে।
সভার উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জেএসডির নেত্রী তানিয়া রব প্রমুখ।
এফপি/টিএ