জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বর্তমানে কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে কক্সবাজারবাসীর যেন ক্ষতি না হয়, তা এখন বিবেচনার সময় এসেছে। তাই দ্রুত এই সংকট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি ও ইনস্টিটিউটের শহীদ দৌলত ময়দানে আয়োজিত ‘জুলাই পদযাত্রা’ উপলক্ষে জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারসহ দেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অপেক্ষায় আছে। আমরা বলেছি, জুলাই মাসের মধ্যেই 'জুলাই সনদ' ঘোষণা করতে হবে। কক্সবাজারে মানুষের কল্যাণে একটি সুস্পষ্ট পর্যটন নীতি প্রণয়ন জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কে পিআর বুঝে, কে পিআর বুঝে না সেজন্য সংস্কার আটকে থাকবে না। আমরা বুঝি, জনগণ সংস্কার চায়। সংসদের উচ্চকক্ষে অবশ্যই পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) চালু করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ও দুদকসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিরপেক্ষ সাংবিধানিক কমিটি গঠন করতে হবে।’
সংস্কার কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে। আগামী ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে “জুলাই সনদ” ঘোষণা করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘অপরাধের গডফাদার’ আখ্যা দিয়ে নাহিদ বলেন, ‘তিনি নিজে যেমন ছিলেন, সারাদেশে তেমনই গডফাদার তৈরি করেছিলেন। যেমন নারায়ণগঞ্জে ছিলেন, তেমনি কক্সবাজারেও ছিলেন। আমরা নতুন করে কোনো গডফাদারের আবির্ভাব হতে দেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনসিপি কক্সবাজারকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবে। নতুন বাংলাদেশে গড়ে উঠবে নতুন কক্সবাজার।’
বক্তব্যের শেষে কক্সবাজারে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদ রোহিঙ্গা নাগরিক নুরুল মোস্তফাকে সরকারি গেজেটভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
জনসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘পরবর্তী বাংলাদেশ গঠিত হবে বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক। তাই বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে আমাদের নতুনভাবে ভাবতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বদিকে বিতাড়িত করেছি, এখন আমাদের মাদকের বিরুদ্ধে, ইয়াবার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া শেখ হাসিনার বড় ভুল ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে। কক্সবাজারের পর্যটন সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কক্সবাজারের জনগণের, চিংড়ি ও লবণ চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘পরবর্তী বাংলাদেশ হবে হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। এর জন্য এনসিপিকে ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে হবে।’
কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সুজাউদ্দিনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. তাসলিম জারা, অনিক রায় প্রমুখ।
এর আগে দুপুর পৌনে ১টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল পদযাত্রা সহকারে কক্সবাজার শহরের দিকে রওনা হয়। পদযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দুপুর ২টার দিকে পাবলিক লাইব্রেরি ও ইনস্টিটিউটের শহীদ দৌলত ময়দানে পৌঁছায়। এ সময় সড়কের দুই পাশে অসংখ্য উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। নেতারা জনসভাস্থলে পৌঁছালে নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু স্লোগানে তাদের স্বাগত জানান।
জনসভা শেষে এনসিপির নেতাদের বহর বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথিমধ্যে রামু, ঈদগাঁও ও চকরিয়ায় পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি।
টিকে/