গাজায় একদিনে প্রাণ হারালেন আরও অন্তত ১১৫ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় একদিনে আরও অন্তত ১১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত মানুষ।

সর্বশেষ এই হামলা চলতি বছরের মে মাসের পর থেকে ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব হামলায় আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

সোমবার (২১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিং এলাকায় অন্তত ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত জনতার ওপর হামলা চালালে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। দক্ষিণে আরেকটি বিতরণ কেন্দ্রের কাছে আরও ৬ জন নিহত হন। এর আগের দিন একইভাবে মারা গিয়েছিলেন ৩৬ জন।

গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯০০ জনের বেশি মানুষ।

আল জাজিরা বলছে, ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আহমেদ হাসুনা। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে একজন যুবক ছিল। হঠাৎ গ্যাস নিক্ষেপ শুরু হলো। গ্যাসেই আমাদের শেষ করে ফেলছিল। আমরা কোনওমতে পালিয়ে এসে একটু নিশ্বাস নিতে পারলাম।”

আরেক বাসিন্দা রিজেক বেতার জানান, আহত এক বৃদ্ধকে তিনি সাইকেলে করে সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরাই তাকে নিয়ে এসেছি।

এখানে অ্যাম্বুলেন্স নেই, খাবার নেই, জীবন নেই, বেঁচে থাকার পথ নেই। আমরা কোনোমতে টিকে আছি। আল্লাহই আমাদের সহায় হোন।”

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ২৫ ট্রাকের একটি ত্রাণবহরে গুলি চালানো হয়। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, “ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত বেসামরিক মানুষের ওপর কোনো ধরনের সহিংসতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা “তাৎক্ষণিক হুমকির” জবাবে “সতর্কতামূলক গুলি” ছুড়েছিল, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ বহর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়নি। অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ জানায়, গাজায় পরিস্থিতি এখন “বিপর্যয়কর”। অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে এবং অনেকে খাবার পাওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে।

ওসিএইচএ-র ভাষ্য, “মানুষ জীবন বাজি রেখে খাবার খুঁজছে। এটি একেবারে অমানবিক।”

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস বলেছে, ক্ষুধার্ত নারীদের, শিশুদের এবং পুরুষদের ওপর ইসরায়েলের এ ধরনের ক্রমাগত হামলা নিছক মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং এটি একটি গণহত্যা, যা পশ্চিমা বিশ্ব নীরব থেকে সম্ভব করছে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন, “পশ্চিমা সরকারগুলোর অজানা নয়, তারা প্রত্যক্ষভাবে দেখছে কীভাবে মানুষকে না খাইয়ে মারা হচ্ছে, ঘরছাড়া করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে— তবুও তারা কিছু করছে না।”

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, গাজার কর্মীরা খাবারের জন্য বারবার হতাশায় বার্তা পাঠাচ্ছেন। তিনি জানান, “সবই মানবসৃষ্ট এবং একেবারে দায়মুক্তিতে ঘটছে। কয়েক কিলোমিটার দূরেই খাদ্য মজুদ থাকলেও সেটি পৌঁছাচ্ছে না।”

ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, তাদের কাছে গাজার সীমান্তে এমন পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে যা তিন মাসের জন্য যথেষ্ট, কিন্তু ইসরায়েল ২ মার্চ থেকে তা আটকে রেখেছে।

গাজার প্যালেস্টিনিয়ান মেডিকেল রিলিফ সোসাইটির পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু আফাশ বলেন, বহু নারী ও শিশু ক্ষুধার কারণে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছি। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শত শত মানুষ এখন ম্যালনিউট্রিশন ও পানিশূন্যতায় ভুগছেন এবং তারা যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ৭১টি শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে এবং আরও ৬০ হাজার শিশু গুরুতর অপুষ্টির লক্ষণ দেখাচ্ছে। শুধু রোববারেই ক্ষুধার জেরে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ক্যামেরা দেখেই হঠাৎ রেগে গেলেন অভিনেতা অমিতাভ Jul 21, 2025
img
আমার কাছের মানুষরাই আমাকে বিশ্বাস করছে না : সালসাবিল Jul 21, 2025
img
জামায়াত আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পারেনি : নিলুফার চৌধুরী Jul 21, 2025
img
বারাক ওবামাকে গ্রেফতারের কৃত্রিম ভিডিও শেয়ার করলেন ট্রাম্প Jul 21, 2025
img
মুশফিকুল ফজল আনসারীকে ধন্যবাদ জানালেন জামায়াত আমির Jul 21, 2025
img
যেখানেই মব দেখবেন সেখানেই উচিত শিক্ষা দেবেন : ইশরাক হোসেন Jul 21, 2025
img
দুই দিনের সফরে ৩০ আগস্ট ঢাকায় আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী Jul 21, 2025
img
আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-নেপালের অঘোষিত ফাইনাল Jul 21, 2025
img
২৯ বছর পর রিয়ালের উইঙ্গারকে দলে টানতে যাচ্ছে বার্সেলোনা! Jul 21, 2025
img
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাহরাইনের তথ্যমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ Jul 21, 2025
img
ধোবাউড়ায় পিকআপ ভর্তি ভারতীয় মদসহ ১ জন আটক Jul 21, 2025
img
ঠোঁট ফুলে বেহাল দশা উরফি জাভেদের Jul 21, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে টি-২০ অভিষেকে ওয়েনের দুর্দান্ত ফিফটি Jul 21, 2025
img
লামিমার কারণে বিয়ে আটকে গেছে শিমুলের! Jul 21, 2025
img
সন্ধ্যার মধ্যে দেশের ৭ অঞ্চলে বজ্রসহ ঝড়ের আভাস Jul 21, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যে সর্বোচ্চ শুল্কহার! কার্যকর ১ আগস্ট থেকে Jul 21, 2025
img
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা Jul 21, 2025
img
শেখ হাসিনা-নিজাম হাজারীসহ দুই শতাধিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে যাচ্ছে পুলিশ Jul 21, 2025
img
উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটি, ৪০ মিনিট আকাশে চক্কর দিয়ে অবতরণ ইন্ডিগোর Jul 21, 2025
img
আরব আমিরাত থেকে আফগানদের বিতাড়নের বিপক্ষে ট্রাম্প Jul 21, 2025