রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা যাচাই বাছাইয়ের মধ্যেই গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এবার এসব নিয়ে মুখ খুলেছেন স্কুলের আগুনে পুড়ে যাওয়া হায়দার আলী ভবনের শিক্ষকা পূর্ণিমা দাস। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষিকা নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ভুল তথ্য ছড়াবেন না।’ সেই সঙ্গে লাশ গুমের বিষয়টি গুজব উল্লেখ করে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
এদিকে পূর্ণিমা দাসের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। বরং বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। অভিনেত্রীর মতে, পূর্ণিমা দাসের স্ট্যাটাসটি ঘটনার সঙ্গে মিলছে না। বরং সন্দেহের সৃষ্টি করছে।
বুধবার সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন সাদিয়া আয়মান। যেখানে পূর্ণিমা দাসের স্ট্যাটাসটি নিয়ে কথা বলেন তিনি। অভিনেত্রী জানান, পূর্ণিমা দাসের স্ট্যাটাসটি তাকে খুব বিরক্ত করছে। কেন করছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে সাদিয়া আয়মান লেখেন, ‘যেখানে স্কুলের হেড পিয়ন নিজেই বলেছে, স্কুল ছুটি হয় ১.৩০ এ, এমনকি অনেক স্টুডেন্ট ও একই কথা বলেছে ।
প্লেন ক্র্যাশ এর সময় ক্লাস চলছিল, ১০ মিনিট পর ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো । স্কুলের এতগুলো শিক্ষার্থী, পিয়ন যেখানে বলেছে ১.৩০ এ স্কুল ছুটি হওয়ার কথা ছিলো সেখানে ২ দিন পর এসে আপনি একা “১ টায়” স্কুল ছুটি হয়ে গেসে বললে তো এটা আমাদের বিরক্ত করবেই ! কোনও ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য কিংবা যৌক্তিক কোনোটাই লাগছেনা আপনার এই ক্লারিফিকেশনে।
পূর্ণিমা দাসকে উদ্দেশ্য করে সাদিয়া আয়মান আরো লেখেন, ‘আপনি লিখেছেন ‘sky’ সেকশনে একটা বাচ্চা দাঁড়ানো ছিলো! সিরিয়াসলি? জুনায়েত থেকে শুরু করে রাইসা মনি সহ অনেক বাচ্চা মারা গেছে যারা স্কাই সেকশনে ছিলো । ক্লাসের মধ্যে এতোগুলো বই খাতা, স্কুল ব্যাগ কোত্থেকে আসলো? নিশ্চয়ই বলবেন না “স্টুডেন্টরা ক্লাসে বই খাতা ব্যাগ রেখে বাসায় চলে যায়, এটাই আপনাদের নিয়ম।”
পূর্ণিমার কথার সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা মিলছে না জানিয়ে অভিনেত্রী লেখেন, “ম্যাডাম, আপনার একার কথার সাথে, এতোগুলো নিরীহ শিক্ষার্থী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কথার কোনও মিল নেই।
এতগুলো স্বনামধন্য নিউজপেপার যারা সত্যতা যাচাই বাছাই না করে নিউজ করেনা তারাও কালকে অব্দি দিয়েছে ২২ জনের নিহতের খবর, কাল রাত থেকে আজ পর্যন্ত চিকিৎসারত আরও কয়েকজন ইন্তেকাল করেছে। আপনার ভাষ্যমতে, স্কাই সেকশনে থাকা একজন, আর কিছু স্টুডেন্ট ক্লাউড সেকশনে থাকা এবং ৩ জন শিক্ষিকা আগুনে পুড়েছে। সেই কিছুর সংখ্যা ৩০+? সেটাকে ‘কিছু’ বলেনা।”
দায়িত্বরতদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাদিয়া আয়মান লেখেন, ‘আর এখনও অনেক পরিবার তাদের সন্তান কিংবা অভিভাবক (যারা বাচ্চা আনতে গিয়েছিল) তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা, সেগুলোর হদিস কে দিবে? লাশ পরিবারের কাছে তুলে দেয়া আপনার বা স্কুলের দায়িত্ব না, এটা যাদের দায়িত্ব তাদের কর্মকাণ্ডই বেশ সন্দিহান। গতকাল বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে রাতে যে ছবি পোস্ট করা হয়েছে তারপর আর সাধারণ জনগণের অথবা ভুক্তভুগীদের আর ভালো কিছু আশা না করাই ভালো।’
সবশেষে পূর্ণিমার স্ট্যাটাসে রাজনৈতিক আভাস পাচ্ছেন জানিয়ে সাদিয়া আয়মান লিখেছেন, ‘আপনি কেন পুরো দুনিয়ার বিরুদ্ধে একটা স্ট্যাটাস লিখলেন, যেটা পলিশিয়ানরা অনেকেই শেয়ার করছে, তাই ব্যাপারটা আরও চোখে লাগলো আরকি! ধন্যবাদ।’
বুধবার সকালে পূর্ণিমা দাসের এই স্ট্যাটাস বেশ সাড়া ফেলে দেয়। স্ট্যাটাসটি ইতোমধ্যে প্রায় দশ হাজারের মতো মানুষ শেয়ারও করেছেন। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও পূর্ণিমা দাসের স্ট্যাটাসটি শেয়ার করতে দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও।
এসএন