খায়রুল হক এজলাসে হাসলেন, বিচারক বললেন এ গ্রেপ্তারে অনেক কিছু শেখার আছে

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হলে শুনানিকালে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

খায়রুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। ৬ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শুনানিতে আদালত কক্ষে এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর মোবাইল ফোনের আলোতে শুনানি চলতে থাকে।

আলোচিত এ শুনানিতে সাবেক এই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ও কটাক্ষ উঠে আসে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম বলেন, ‘হাসিনার কৃতদাস ছিলেন খায়রুল হক। তার নির্দেশে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছেন তিনি। এখন সেই অবিচারের ফলেই নিজেই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন।’ 

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি হত্যা মামলার আসামি। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের উসকানিদাতা। তার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করি।’

পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার আরও বলেন, ‘তিনি কলঙ্কিত একজন প্রধান বিচারপতি। তার কারণে ১৭ বছর ধরে বহু মানুষ গুম-হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার হতে বাধ্য হয়েছেন।’ এ সব বক্তব্য শুনে খায়রুল হককে আদালতে হাসতে দেখা যায়।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, ‘এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে দেশের প্রধান বিচারপতি হন, তা বোধগম্য নয়। তিনি ছোট থেকেই পাপী ছিলেন। শত বছর বেঁচেও তার পাপমোচন সম্ভব নয়।’ 

শুনানি শেষে বিচারক বলেন, ‘মানুষের শ্রদ্ধা কর্মের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। কর্মের মধ্য দিয়েই ভালবাসা বা ঘৃণা তৈরি হয়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে অনেক কিছু শেখার আছে। আপনি যদি আমাকে শ্রদ্ধা করেন, সেটা আমার কর্মের কারণে। ঘৃণাও যদি করেন, সেটাও আমার কর্মের ফল।’ পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, এ বি এম খায়রুল হক ছিলেন দেশের ঊনবিংশতম প্রধান বিচারপতি। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাত, বিতর্কিত রায় এবং সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করার অভিযোগ বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল।

এই প্রথম কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে খুনের মামলায় গ্রেপ্তার ও জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনা ঘটল।

ইউটি/টিএ



Share this news on:

সর্বশেষ

img

বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত নেতার আক্ষেপ

‎‘তারেক রহমানের নাম যতবার নিয়েছি, আল্লাহর নাম নিলে বেহেশতে চলে যেতাম’ Nov 10, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককে অন্তত ২ হাজার ডলার দেওয়ার ঘোষণা ট্রাম্পের Nov 10, 2025
img
জন্মদিনে ভিন্ন রূপে মুগ্ধতা ছড়ালেন চিত্রনায়িকা মিম Nov 10, 2025
img
চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে সব দলকে ঐকমত্যে আসার, এটা এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল: ফখরুল Nov 10, 2025
img
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল দম্পতির Nov 10, 2025
img
মোহাম্মদ আমির ও মেন্ডিসকে দলে ভেড়াল সিলেট টাইটান্স Nov 10, 2025
img
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ২ গ্রেড উন্নীতের প্রস্তাব, বাড়তি ব্যয় ৮৩২ কোটি Nov 10, 2025
img
জাপানের পূর্ব উপকূলে শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি Nov 10, 2025
img
উত্তরে শীতের আমেজ, পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা কমে ১৬ ডিগ্রিতে Nov 10, 2025
img
আ স ম রবের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে আমি এসেছি : তানিয়া রব Nov 10, 2025
img
ইকুয়েডরে কারাগারে দাঙ্গা, প্রাণ হারালেন ৩১ জন Nov 10, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক জনের Nov 10, 2025
img
ধানের শীষে ভোট চাওয়ায় ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন জামায়াত প্রার্থীর Nov 10, 2025
img
ইসরায়েলের বিষয়ে নিজেদের শর্ত আরও কঠোর করল সৌদি আরব Nov 10, 2025
img
মুম্বাইয়ে নেহা কক্করের নাম করে বড় ধরনের প্রতারণার অভিযোগ Nov 10, 2025
img
শিক্ষকদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন আজ Nov 10, 2025
img
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য: অর্থ উপদেষ্ট Nov 10, 2025
img
যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে লেবাননে আবারও হামলা চালাল ইসরায়েল Nov 10, 2025
img

ভিডিও ভাইরাল

শেখ হাসিনাকে জিয়াউর রহমানের ‘স্ত্রী’ বলে বিতর্কে বিএনপি নেতা Nov 10, 2025
img
অক্টোবরে প্রায় ২০৭ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি Nov 10, 2025