আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি: জামায়াত আমির

আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুল রহমান। 

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

জামায়াত আমির বলেন, আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও দখলদারি আমাদের সংস্কৃতি নয়। যে দল এমন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নিশ্চয়তা দিতে পারে না তাদের কাছে জনগণ নিরাপদ নয়।

সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আমরা একটা মজলুম দল, কিন্তু একমাত্র মজলুম নই। বিগত ১৭ বছর বিরোধী সব রাজনৈতিক দল, ১৮ কোটি মানুষ মজলুম ছিল। এই অবস্থার উত্তরণে ছাত্ররা ডাক দিয়েছে, কিন্তু সমাজের কোনো পেশার মানুষ বাদ যায়নি। সবাই ঝাপিয়ে পড়েছে। এই আন্দোলনের সম্পূর্ণ ক্রেডিট তাদের, কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়।

তিনি জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী আমরা শহীদ ও আহতদের পাশে দাঁড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমরা সব সময় পাশে আছি, থাকবো। নৈতিক দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি।’

ক্ষমতায় গেলে সবার আগে শহীদ ও আহত পরিবারকে যথাযথ সম্মান ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে শহীদ পরিবারগুলোর মধ্যে ৭০ ভাগ খেটে খাওয়া মানুষ। আমরা ক্ষমতায় যেতে পারলে এইসব পরিবারকে সবার আগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’

সরকারকে সহযোগিতা থাকবে, কিন্তু যেখানে দুর্বলতা সেখানে ছাড় দিয়ে কথা বলবো না বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের আমির। তিনি সরকারের কাছে দুই দাবি তুলে ধরে বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করুন এবং খুনিদের বিচার নিশ্চিত করুন।’

ডা. শফিকুর রহমান চা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি তাদের সঙ্গে বসেছি। তাদের সম্মানজনকভাবে বাঁচার কি অধিকার নেই? তারা অধিকারের কথা বললে বাগান মালিকের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এই সেক্টর এগিয়ে নেওয়ার কোনো চিন্তা কোনো সরকারের ছিল না। আমরা ক্ষমতায় যেতে পারলে চা শ্রমিক, বস্তির নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে সবার মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।

বৈদেশিক সম্পর্কে কারো প্রভুত্ব মানা হবে না জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ অগ্রাধিকার পাবেন। কিন্তু আমাদের অধিকার হরণ করতে চাইলে দেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রতিহত করবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে নাক গলাতে দিব না।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ন্যূনতম (বেসিক) সংস্কার ছাড়া নির্বাচন আমরা চাই না। নির্বাচনের আগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যাকারী শীর্ষ অপরাধীদের বিচার হতে হবে। যুবকেরা রাস্তা চিনে ফেলেছে। ধানাই পানাই করলে যুবকেরা আরেকটা অভ্যুত্থান সংঘটিত করবে। এতে জামায়াত সঙ্গে থাকবে। যেখানে যুব সমাজ জাগে সেই সমাজ হারিয়ে যায় না। আমরা মুক্তির লড়াই করেছি, ফিনিশিং তাদের (ছাত্রদের) হাতে হয়েছে।

এই আন্দোলনে কেউ মাস্টার মাইন্ড নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক-দুজনকে মাস্টার মাইন্ড বললে বাকিদের আন্ডার মাইন্ড করা হবে। যারা লড়াই করেছেন সবাই এই আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ড।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাশেও সরকার ঠিকমতো দাঁড়ায়নি। আমরা সরকারে গেলে প্রথমেই আহত জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসার নিশ্চয়তাসহ শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াব।

মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শাহজাহান আলী ও নায়েবে আমির নুরুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। বক্তব্য দেন, জামায়াতের সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলা আমির মখলিছুর রহমান, সিলেট জেলার সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, মাওলানা লুৎফর রহমান হুমায়দী, জামিল আহমদ রাজু, শামীম আহমদ, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখ।

ইউটি/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
চাঁদপুরে রিজভীর স্বাক্ষর জাল করে কমিটি বিলুপ্তির বিজ্ঞপ্তি Jul 26, 2025
img
'গোটা জাতি আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জামায়াতের দিকে তাকিয়ে আছে' Jul 26, 2025
img
৫ আগস্ট জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জোনায়েদ সাকির Jul 26, 2025
img
খুলনায় গ্রাহককে হাতুড়িপেটা, ইসলামী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার Jul 26, 2025
img
আসলে মোদির কোনো দম নেই: রাহুল গান্ধী Jul 26, 2025
img
ট্রাম্পকে জান্তাপ্রধানের চিঠির পর গোপনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল যুক্তরাষ্ট্র Jul 26, 2025
img
ভারতীয় পেসার ইয়াশ দয়ালের বিরুদ্ধে মাস না যেতেই ধর্ষণের দ্বিতীয় মামলা Jul 26, 2025
img
সমর্থকের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর যে ব্যাখ্যা দিলেন নেইমার জুনিয়র Jul 26, 2025
img
ইউনাইটেড এফসির নতুন কোচ হলেন পিরলো Jul 26, 2025
img
ইউরোপা লিগ থেকে অবনমনের বিপক্ষে আপিল করেছে ক্রিস্টাল প্যালেস Jul 26, 2025
img
চাঁদপুরে পুলিশের অভিযানে আটক ৩১ জন Jul 26, 2025
হল নির্মাণে প্রসেনজিতের উদ্যোগে মুগ্ধ মমতা Jul 26, 2025
পরমাণু উত্তেজনায় ফের উত্তপ্ত ইরান-ইউরোপ কূটনৈতিক মঞ্চ Jul 26, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Jul 26, 2025
img
চট্টগ্রামে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বলে টিকটক বানাতে গিয়ে আটক ১২ জন Jul 26, 2025
শাহজালালে বিদেশগামী যাত্রীকে বিদায় দিতে যেতে পারবেন সর্বোচ্চ ২ জন Jul 26, 2025
img
'দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করবে বিএনপি' Jul 26, 2025
img
গুলিতে নিহতের ২১ ঘণ্টা পর বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর করল বিএসএফ Jul 26, 2025
img
মহাকাশ থেকে স্বামীর ভিডিও কলে চমকে উঠলেন স্ত্রী! কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করেন নভোচারীরা? Jul 26, 2025
img
রূপচর্চার পাশাপাশি ওজনও কমাবে সারা তেন্ডুলকারের প্রিয় মাচা প্রোটিন স্মুদি Jul 26, 2025