বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা কোথায় থাকেন, এই প্রশ্নের জবাবে আমাদের অনেকেই চোখ বন্ধ করে আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের নাম বলি। যুক্তরাষ্ট্র যে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ, এ ধারণা অনেকেরই। তবে ‘ধনী’ শব্দটি কেবল আয় নয়, জীবনযাত্রার ব্যয়, কর্মঘণ্টা এবং জীবনমানের ওপরও নির্ভর করে।
এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই দ্য ইকোনমিস্ট সম্প্রতি ১৭৮টি দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা তিনটি ভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে দেশগুলোর প্রকৃত ‘ধনসম্পন্নতা’ মূল্যায়ন করেছে।
তিনটি সূচক যা ব্যবহার করা হয়েছে:
মাথাপিছু জিডিপি (বাজার বিনিময় হারে): এটি বহুল ব্যবহৃত একটি অর্থনৈতিক সূচক, তবে এটি বিভিন্ন দেশের দামের তারতম্য বিবেচনায় নেয় না।
ক্রয়ক্ষমতা সমন্বিত মাথাপিছু আয় (PPP): এটি দেশভেদে মূল্যস্তরের পার্থক্য বিবেচনায় নিয়ে মানুষের প্রকৃত আয় পরিমাপ করে।
আয়ের পাশাপাশি কর্মঘণ্টা বিবেচনায় নেয়া সূচক: এই সূচকে দেখা হয় একজন কর্মীর গড় আয় এবং তাকে সপ্তাহে বা বছরে কত ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
শীর্ষ দেশগুলো কারা?
এই তিন সূচকের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং নরওয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
সুইজারল্যান্ড এর একজন মানুষের গড় আয় বছরে ১ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি হলেও, দেশটি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল হওয়ায় সে আয় দিয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় না।
সিঙ্গাপুর এর গড় আয় ৯০,৭০০ ডলার হলেও মূল্যসাপেক্ষে তাদের জীবনমান তুলনামূলক ভালো।
আর কর্মঘণ্টার হিসেবে নিলে নরওয়ে প্রথম স্থান দখল করেছে, অর্থাৎ কম সময় কাজ করেও বেশি আয় করছে তাদের জনগণ।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অবস্থান
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র তিনটি সূচকে যথাক্রমে চতুর্থ, সপ্তম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের অবস্থান আরও পেছনে ১৯তম, ২৭তম ও ২৫তম।
সামাজিক রীতিনীতির প্রভাব
ইকোনমিস্ট বলছে, দেশভেদে কর্মসংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতির পার্থক্যও এই র্যাংকিংয়ে বড় প্রভাব ফেলে। যেমন—
সৌদি আরব ও তুরস্কে অনেক কম সংখ্যক নারী বেতনভুক্ত কর্মজীবী হিসেবে কাজ করেন, ফলে মাথাপিছু আয়ে প্রভাব পড়ে।
ইতালির মতো দেশগুলিতে অধিকাংশ মানুষ অবসরপ্রাপ্ত, অন্যদিকে নাইজেরিয়াতে অনেকেই এখনো কর্মক্ষম নন। এতে ছোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে বড় গোষ্ঠীকে বহন করতে হয়।
গায়ানার চমক
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গায়ানা এই তালিকায় সবচেয়ে বড় অগ্রগতি দেখিয়েছে ১৭ ধাপ এগিয়েছে। দেশটির তেল শিল্পে ব্যাপক অগ্রগতি এবং বছরে গড় আয়ের ৪০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি এর পেছনে বড় কারণ।
তালিকার একেবারে নিচে রয়েছে বুরুন্ডি। দেশটির অধিকাংশ জনসংখ্যা ১৭ বছরের নিচে এবং তাদের মাথাপিছু আয় সুইজারল্যান্ডের দশমিক ১৫ শতাংশ মাত্র।
আলাদা আলাদা সূচকে শীর্ষ ৫ দেশ:
বাজার বিনিময় হারে মাথাপিছু জিডিপি (GDP):
নরওয়ে
সুইজারল্যান্ড
সিঙ্গাপুর
বেলজিয়াম
নেদারল্যান্ডস
ক্রয়ক্ষমতা সমন্বিত আয় (PPP):
কাতার
যুক্তরাষ্ট্র
আইসল্যান্ড
ইউএই
কানাডা
আয় ও কর্মঘণ্টা মিলিয়ে:
ডেনমার্ক
ব্রুনেই
ম্যাকাও
কানাডা
হংকং
এফপি/টিকে