যুক্তরাষ্ট্রে অল্টারনেটিভস টু ডিটেনশন- এটিডি পোগ্রামের আওতায় থাকা অভিবাসীদের পায়ে জিপিএস মনিটর যুক্ত করার সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সম্প্রতি আইসের অভ্যন্তরীণ একটি মেমোতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। ৯ জুন অনুমোদিত ওই মেমো অনুযায়ী, এখন থেকে এটিডি প্রোগ্রামে থাকা প্রত্যেক অভিবাসীর গোড়ালিতে জিপিএস মনিটর লাগাতে হবে।
বর্তমানে এ কর্মসূচিতে নথিভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার।
এদের মধ্যে মাত্র ২৪ হাজার জনের পায়ে জিপিএস মনিটর রয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এই সংখ্যা বহুগুণ বাড়বে।
আইসের এমন পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিবাসী অধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা। তাদের অভিযোগ, এই কালো ভারী মনিটর শারীরিকভাবে অস্বস্তিকর ও অপমানজনক।
এটি অভিবাসীদের সামাজিকভাবে হেয় করছে, এমনকি তাদের গোপনীয়তাও লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
আইনজীবীরা বলছেন, মনিটর পরতে বাধ্য হওয়া অনেক অভিবাসীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ নেই, এমনকি আদালতের শুনানিতে হাজির না হওয়ার ইতিহাসও নেই।
আইসের মুখপাত্র এমিলি কোভিংটন বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও জানিয়েছেন, সংস্থা অভিবাসন আইন বাস্তবায়নের স্বার্থে জিপিএস মনিটরকে একটি ‘কার্যকর হাতিয়ার’ হিসেবে দেখছে। তার ভাষায়, ‘এটি জবাবদিহিতার জন্য নতুন কিছু নয়।’
বর্তমানে এই মনিটরিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে জিও গ্রুপের সহযোগী সংস্থা বিআই ইনকর্পোরেটেড। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ট্রাম্পের ২০২৪ সালের প্রচার ও উদ্বোধন কমিটিতে জিও গ্রুপ ১৫ লাখ ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে।
তবে আইসের চাহিদা মেটাতে বিআই এককভাবে সক্ষম নাও হতে পারে। তাই সংস্থাটি অন্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন এ বিষয়ে পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
নতুন নির্দেশনার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আইস অফিসগুলোতে অভিবাসীদের চাপ বেড়েছে।
সম্প্রতি ভার্জিনিয়ায় আইসের একটি ফিল্ড অফিসে দেখা গেছে, প্রায় ৫০ জন অভিবাসী জিপিএস ডিভাইস পরার অপেক্ষায় ছিলেন।
আইসের এক কর্মকর্তার বরাতে এক ইমিগ্রেশন আইনজীবী জানান, উপস্থিত সবাইকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়- ‘হয় মনিটর পরুন, নয়তো আটকে থাকুন।’
আইসের তথ্য অনুযায়ী, বেশির ভাগ অননুমোদিত অভিবাসীর আদালতে শুনানিতে অংশ নিতে হয় অথবা মামলার নিষ্পত্তির আগে মাঠ পর্যায়ের অফিসে নিয়মিত চেক-ইন করতে হয়।
তবে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৮৩ শতাংশ মুক্ত অবস্থায় থাকা অভিবাসী তাদের সব আদালত শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
এটিডি প্রোগ্রামের আওতায় থাকা অভিবাসীরা সাধারণত অ্যাপ ব্যবহার করে ভার্চুয়ালি চেক-ইন করেন অথবা সরাসরি কেস ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করেন। পায়ের মনিটর এখনও সীমিত সংখ্যক অভিবাসীর জন্য বাধ্যতামূলক।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন উদ্যোগে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত নতুন করে ৪ হাজার ১৬৫ জন অভিবাসীকে মনিটর পরতে বাধ্য করা হয়েছে।
কলোরাডোর বোল্ডারে বিআইয়ের কারখানায় তৈরি এই ডিভাইসগুলোর ওজন প্রায় ছয় আউন্স, অর্থাৎ একটি আইফোনের সমান। এগুলো দীর্ঘ সময় পরার ফলে অনেকের গোড়ালিতে ক্ষত বা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
কেএন/টিকে