আদালত প্রাঙ্গণে ‘চাঁদাবাজ’ স্লোগান, মাথা নিচু বৈষম্যবিরোধী ৪ ছাত্রনেতার

সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ চারজনের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই মামলায় গ্রেপ্তার এক শিশুকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে নেওয়া অন্য আসামিরা হলেন- সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও মো. ইব্রাহিম হোসেন।

রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান শুনানি শেষে তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন বিকেল ৪টা ৫ মিনিটের দিকে তাদের একটি প্রাইভেটকারে করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। তাদের সরাসরি সিএমএম আদালতের চারতলায় জিয়াদুর রহমানের আদালতে তোলা হয়। আদালতে তোলার সময় তাদের দেখে আদালত প্রাঙ্গণে ‘চাঁদাবাজ’ ‘চাঁদাবাজ’ বলে স্লোগান দেন উপস্থিত লোকজন ও আইনজীবীরা। চাঁদাবাজ স্লোগান শুনে মাথা নিচু করে রাখেন গ্রেপ্তার এই ছাত্রনেতারা।

তাদের আসামির কাঠগড়ায় রাখা হলে আইনজীবীদের সাথে কথা বলেন। এসময় ইব্রাহিম তার আইনজীবীকে বলেন, আমরা চাঁদা চাইনি। সেখানে আওয়ামী লীগের দোসর আছে একথা জানিয়ে পুলিশকে ফোন দেয়। তারা বলে ফোর্স পাঠাচ্ছে, কিন্তু পাঠায়নি। সিয়াম বলেন, আমরা ওই বাসায় যায়নি। নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ৪ টা ১৭ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। তখন আদালতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা, চিল্লাচিল্লি শোনা যায়। তখন বিচারক বলেন, আমরা হিয়ারিংটা শুনি। হট্টগোল করা যাবে না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। তিনি আদালতকে জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ মামলার রহস্য উদঘাটন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনার সঙ্গে কোনো গডফাদার জড়িত আছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য রিমান্ড প্রয়োজন।

রাষ্ট্রপক্ষে শামসুদ্দোহা সুমন রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে এই চারজনকে কুলাঙ্গার দাবি করে তিনি বলেন, ওদের এতো কম বয়স, কেন ওদের কোটি কোটি টাকা দরকার।
শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে এই চক্রসহ বহুলোক ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ অভিজাত এলাকায় কে, কোন এলাকায় অবস্থান নিচ্ছে তার খবর নিতো। পরে ওই বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবি করতো। তারা নিজেরা চাঁদাবাজি করে তারেক রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য করতেন। ওই বাসা সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের। তিনি বাসায় নেই। তার স্বামী ওই বাসায় থাকেন। তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। বিষয়টা এমন না যে বাকী দিনগুলো তারা চাঁদাবাজি করেনি। কত কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে।

তিনি বলেন, তারেক রহমানকে চাঁদাবাজ সাব্যস্ত করে তারা হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চায়। সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি। এরা কুলাঙ্গার। এদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ওদের এতো কম বয়স, কেন ওদের কোটি কোটি টাকা দরকার।

এসময় বাদী ও রাষ্ট্র পক্ষে সহযোগিতা করে বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী বলেন, আগে এদের খাওয়ার টাকা ছিল না। এখন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে ঘোরে। তারা আশা করেন, চাঁদাবাজদের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াবেন না।

আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদের ভূঁইয়া রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, চাঁদাবাজ ও অন্যায়ের পক্ষে কেউ থাকতে পারে না। আমার একটাই বক্তব্য, ওই বাসায় যাওয়ার আগে ওনারা (আসামিরা) থানায় ফোন দিয়েছিলেন। যদি পুলিশকে ফোন দিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টা ভিন্ন। আমরা চাঁদাবাজ মুক্ত একটি সুন্দর পরিবেশ, আমাদের সন্তানদের জন্য চাই। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

এরপর তাদের এজলাস থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ও আইনজীবীরা তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। আসামিদের চড়-থাপ্পড়ও মারেন আইনজীবীরা। পরে দ্রুত তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে ওই শিশুকে গাজীপুরের টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক মো. শওকত আলী।

এর আগে রোববার শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। এতে তিনি ছয়জনকে আসামি করেন। রিয়াদ ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- কাজী গৌরব অপু, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন ও আইনের সংঘাতে জড়িত শিশু মো. আমিনুল ইসলাম।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই সকাল ১০ টায় আসামি আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, কাজী গৌরব অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি শাম্মি আহম্মেদের বাসায় যান। তখন তারা হুমকি ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন এবং টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে মামলার বাদী সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ভাইয়ের কাছে থেকে নিয়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করেন। এ ঘটনার পর গত ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে আসামি রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার ফ্ল্যাটের দরজায় সজোরে ধাক্কা মারেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে অবহিত করলে আসামিরা চলে যায়। পরে ২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫ টায় আসামি রিয়াদের নেতৃত্বে অপরাপর আসামিরা বাদীর বাসার সামনে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন। বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানান। তখন আসামিদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। পরে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে তাৎক্ষণিক গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচ আসামিকে হাতেনাতে আটক করে এবং ঐ সময় এজাহারনামীয় আসামি কাজী গৌরব অপু দৌড়ে পালিয়ে যান। 

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হাতুড়ি দিয়ে আদালত চত্বরে সাক্ষির নাক ফাটিয়ে দিলেন আসামিরা Jul 27, 2025
img
সমন্বয়ক পরিচয়ে কেউ চাঁদাবাজি করতে গেলে পুলিশে দেবেন : সারজিস Jul 27, 2025
img
রিয়াদকে নিয়ে সংবাদ ‘মিথ্যা’, জানাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় Jul 27, 2025
img
পুরনো আইনে বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে দেব না: নাহিদ ইসলাম Jul 27, 2025
img
১৮ জুলাই রাতের স্মৃতিচারণ করলে সারজিস ক্ষেপে যান কেন?- প্রশ্ন সমন্বয়ক হাসিবের Jul 27, 2025
img
স্বাস্থ্য খাতের টেকসই সংস্কারে সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধান উপদেষ্টা Jul 27, 2025
img
বাবার মতো আকস্মিক মৃত্যুর খবর এলো ছেলে রাতুলের Jul 27, 2025
তৈরি হয়ে গেছে জুলাই সনদের খসড়া, পাঠানো হচ্ছে দলগুলোর কাছে Jul 27, 2025
গুলশানে ধরা পড়া বৈষম্যবিরোধী পরিচয়ে ৪ জন যেভাবে আদালতে Jul 27, 2025
img
নিরাপত্তা শঙ্কায় রুশ নৌবাহিনীর বার্ষিক কুচকাওয়াজ বাতিল Jul 27, 2025
img
যে আকাঙ্ক্ষায় ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে হটিয়েছি তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি : নাহিদ Jul 27, 2025
img
আইকনিক মসজিদ নির্মাণে ২৪৪ কোটি টাকার অনুদান দিবে সৌদি সরকার Jul 27, 2025
যে ৭জন মানুষ আরশের নিচে ছায়া পাবে | ইসলামিক জ্ঞান Jul 27, 2025
img
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: ডিএনএ শনাক্তে ভুল সংশোধন, কমলো মৃত্যুর সংখ্যা Jul 27, 2025
বিশ্বকাপে মেসির খেলা নিয়ে জল্পনা Jul 27, 2025
মুছে দেওয়া হল আল আজহারের গাজা বিবৃতি, ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলিম বিশ্ব Jul 27, 2025
img
গত ৫ বছরে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর Jul 27, 2025
গুলশান চাঁদাবাজি মামলা: আদালতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা Jul 27, 2025
img
সংসদে নারী আসনের বিষয়ে ২ প্রস্তাব বিএনপির Jul 27, 2025
চুয়াডাঙ্গার বিচারক দোলনের বিরুদ্ধে তরুণীর মামলা Jul 27, 2025