রাষ্ট্রের মূলনীতির বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের মূলনীতি বিষয়ে যে আলোচনা এটি আজকে চতুর্থ দিনের মতো ছিল। এই চার দিনের আলোচনায় আমরা দেখেছি, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে যেসব প্রস্তাব (সাম্য ও মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি) কমিশনের পক্ষ থেকে সংশোধিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল। এগুলো কীভাবে সংবিধানে উল্লেখিত হবে এ বিষয় নিয়ে ঐকমত্যে আসা যাচ্ছে না।
রোববার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার ১৯তম দিনের বৈঠকের সন্ধ্যা বিরতির সময় ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, একপক্ষ থেকে বিদ্যমান যে চার মূলনীতি আছে তার সঙ্গে এটিকে সংযুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে, বিদ্যমান ৪টি মূলনীতির বিষয়ে কোনো বক্তব্য না রেখেই। কেউ কেউ বলছেন, ভবিষ্যতে অন্যান্য বিষয়গুলো উল্লেখিত হতে পারে আবার নাও হতে পারে। ফলে আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, এ বিষয়ে ঐকমত্যে আসা যাচ্ছে না।
কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিশন এখন এটাকে পুনর্বিবেচনার জন্য নিয়েছে। কমিশনকে এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমরা আশা করছি, ৩১ জুলাইয়ের আগেই আমরা এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেব। বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ।
কমিশনের উদ্দেশ্য হবে—পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও প্রভাব মুক্তভাবে দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা, বাহিনীর সদস্যদের উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি— বলেন তিনি।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, এই কমিশন হবে স্বাধীন, ৯ সদস্যবিশিষ্ট এবং এর কাঠামো, দায়িত্ব ও এখতিয়ার আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে দুইজন নারী সদস্য থাকবেন।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী—পুলিশের বেআইনি কার্যকলাপের ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ, বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা, নাগরিক অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, বেআইনি চাপের বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা, পুলিশি আইন ও বিধির সংস্কার এবং প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা কমিশনের থাকবে।
তিনি বলেন, ‘কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে।’
বৈঠকে আরেকটি বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদের সীমা নির্ধারণ জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছে যে একজন ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
আজকের আলোচনার শেষ বিষয় ছিল সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব। এ বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজনৈতিক দলগুলো যেন অন্তত এক চতুর্থাংশ কিংবা এক পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়— বলেন আলী রীয়াজ।