সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই নিজের বিভিন্ন ভাবনা-চিন্তা ও অনুভূতির কথা শেয়ার করেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। সম্প্রতি এক স্ট্যাটাসে তিনি জানিয়েছেন, তার জীবনের বেশিরভাগ শিক্ষা এসেছে কষ্ট, বিশ্বাসঘাতকতা আর অপমানের মধ্যে দিয়ে।
শুধু তাই নয়, সেখানে নিজের সাবেক স্বামীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়েও আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী বাংলাদেশ টাইমস পাঠকদের জন্য বাঁধনের স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল-
আমার জীবনের বেশিরভাগ শিক্ষা এসেছে না বই থেকে, না কারো উপদেশ থেকে এসেছে কষ্ট, বিশ্বাসঘাতকতা আর অপমান টিকে থাকার মধ্য দিয়ে। একটি অভিজ্ঞতা, আমার মেয়ের অভিভাবকত্ব মামলা চলাকালে, আমাকে এমন কিছু শিখিয়েছে যা আমি কখনো ভুলতে পারব না।
আমার প্রাক্তন স্বামী তার কিছু সহকর্মী ও একজন ফটোসাংবাদিকের সহায়তায়, যিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার জন্য পরিচিত ,আমার বিরুদ্ধে নোংরা এক প্রচার শুরু করে। তারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা গল্প ছড়ায়, যেন প্রমাণ করতে পারে আমি “খারাপ মা” এবং “লজ্জাহীন নারী”। আমার ছবি ছাপানো হয় সর্বত্র, শিরোনামগুলো চিৎকার করে মিথ্যা বলে।
আমি যাদের আপন ভাবতাম, তাদের অনেকেই তখন চুপ করে ছিল। কেবল কিছু বিনোদন সাংবাদিক বন্ধু এবং অনেক অচেনা শুভাকাঙ্ক্ষী পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সবচেয়ে কষ্টকর ছিল না এই প্রকাশ্য চরিত্র হনন। সবচেয়ে বেশি ব্যথা দিয়েছিল বিশ্বাসঘাতকতা।
সে শুধু আমার সাবেক স্বামী ছিল না ,সে ছিল আমার সন্তানের বাবা। তবুও, সে আমাকে ধ্বংস করার পথ বেছে নিল। আমি তাকে ভালোবাসতাম না, কিন্তু আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। আর সেই বিশ্বাসটাই সে সবচেয়ে নির্মমভাবে ভেঙে দিল।
পরদিন আমি এক বন্ধুর বাড়িতে ভেঙে পড়েছিলাম। এত কাঁদছিলাম যে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমি জানতাম না কী করব, কী বলব কারণ আমার যেকোনো পদক্ষেপ মামলার রায়কে প্রভাবিত করতে পারত।
তখন আমার সেই বন্ধুর স্বামী একটি কথা বললেন, যা আমার জীবন বদলে দিল, “তোমার সামনে দুটি পথ আছে। এক তুমি তার চেয়েও বেশি রাগী আর হিংস্র হয়ে ওঠো। দুই তুমি বেছে নাও কঠিন কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ পথ: নীরবতা, সত্য আর আত্মসম্মান। প্রথমটি হয়তো তাত্ক্ষণিক প্রশান্তি দেবে, কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে তোমাকেই গ্রাস করবে। দ্বিতীয়টি যদি তুমি আঁকড়ে ধরতে পারো তোমায় সারিয়ে তুলবে, মুক্তি দেবে।”
আমি দ্বিতীয় পথটি বেছে নিয়েছিলাম। সহজ ছিল না। কিন্তু এটা আমাকে এক ধরনের শক্তি দিয়েছিল, যা আমার নিজের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল।
সেই সময়ের পর থেকে, যখনই কেউ আমাকে অপমান বা আক্রমণ করতে চায়, আমি সাড়া দিই না। আমি তাদের হাতে তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া তুলে দিই না।
আর এই নীরবতা এই আত্মনিয়ন্ত্রণ তাদের বেশি কষ্ট দেয়, যে কোনো কথার চেয়েও। কারণ যখন তারা এখনো নিজেদের ঘৃণা আর রাগে ডুবে থাকে, আমি তখন অনেকদূর এগিয়ে গেছি -শান্তি, স্পষ্টতা আর সম্মান নিয়ে।
এমকে/টিএ