রাজধানীর কাঁচাবাজারে ফের বাড়তে শুরু করেছে ব্রয়লারসহ অন্যান্য সব মুরগির দাম। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে এই মাংসের দাম। তবে মাছের বাজার স্থিতিশীল। আগের মতোই রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম।
আজ (শুক্রবার) সকালে রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় আজ সকাল থেকেই বাজারে ক্রেতার সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি। সেইসঙ্গে দামও বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে— ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়, এক সপ্তাহ আগেও সেটি ছিল ১৫০ টাকা। সোনালি মুরগির দামও বেড়ে এখন ৩০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হাসিব উল্লাহ বলেন, “প্রতি শুক্রবারেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। আগে ব্রয়লার মুরগি কিনেছি ১৫০ টাকায়, আজ দেখি ১৬৫ টাকা চাচ্ছে, এরপর দামদর করে ১৬০ টাকা কেজি নিয়েছি। এই দিনটায় অধিকাংশ চাকরিজীবীরা সপ্তাহের বাজার করে ফেলে, তাই সুযোগ বুঝে ব্যাবসায়ীরা দামও বাড়িয়ে দেয়।’’
বনশ্রী এ ব্লক কাঁচাবাজারের ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বললেন, “আমার মতে ব্রয়লার মুরগি দাম ১৪০-১৫০ টাকার মধ্যে থাকলে সেটাকে স্বাভাবিক বলা যায়। এই দামে থাকলে গরিব ধনী সবাই নিজেদের চাহিদা মতো খেতে পারবে। কিন্তু আজ বনশ্রীর এই বাজারে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও গত সপ্তাহেও মনে হয় ১০-১৫ টাকা কম ছিল। মাঝেমধ্যেই হঠাৎ করে দাম কেন জানি বেড়ে যায়।”
একই বাজারের মুরগি বিক্রেতা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “মাসখানেক হলো মুরগির বাজার ওঠানামার মধ্যে আছে। মাঝখানে বেড়ে গিয়েও আবার কিছুটা কমেছে। এখন আবার একটু বাড়তির দিকে। গত সপ্তাহেও ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি করেছি, আজকের বাজারে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমরা আগে যেখানে ১৪০ টাকা দরে ব্রয়লার কিনতাম, এখন সেখানে কিনতে হচ্ছে ১৫০–১৫৫ টাকায়। আমাদের যে খরচ, তাতে অন্তত ১৫ টাকা লাভ না রাখলে ব্যবসা টিকবে না। এই দামে বিক্রি করতেই বাধ্য হচ্ছি।”
ঈদুল আজহার প্রায় দুইমাস হতে চললেও রাজধানীর গরু-খাসির মাংসের বাজারে এখনও অনেকটাই নীরবতা দেখা গেছে। যে কারণে গরু, খাসি ও ছাগলের মাংসের দোকানগুলোতে এখনো ক্রেতার অভাব।
খিলগাঁও বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেন বলেন, “ঈদের পর এমনটা হতেই পারে, তবে এবার একটু বেশি সময় ধরে লোকজন মাংস কিনছে না। যারাও আসছে, দামাদামি করে কিছু মানুষ কিনছে, আবার কিছু চলে যাচ্ছে। আজকের বাজারে গরু ৭৫০–৭৮০, খাসি ১১০০ আর ছাগল ১০০০ টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মনে হচ্ছে মানুষ এখন গরুর মাংস ছেড়ে মাছ-মুরগিতে চলে গেছে।”
মাছের বাজারে তুলনামূলকভাবে কিছুটা গতি রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দামেও নেই বড় কোনো ওঠানামা। রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩৪০ টাকা কেজিতে। পাবদা ৩৫০–৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০–৭০০, টেংরা ৬০০–৭০০, শিং ৪০০–৪৫০, কৈ ২০০–২২০ এবং তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস পাওয়া যাচ্ছে ১৮০–২০০ টাকায়।
সকালবেলা বাজারে আসা চাকরিজীবী মনিরুল ইসলাম বলেন, “পাবদা আর তেলাপিয়া নিলাম। দাম কিছুটা বেশি মনে হলেও মান অনুযায়ী খারাপ না। আমার মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য মাছ এখন সবচেয়ে ব্যালান্সড অপশন।”
মাছ বিক্রেতা হুমায়ুন কবির বললেন, “মাংসের বাজারে যে দাম, তাতে মাছই এখন সাধারণ মানুষের ভরসা। রুই-কাতল ভালো যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন—মাংস আর খেতে ইচ্ছে করছে না, মাছই চাই।”
এসএন